পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য শান্তি চুক্তি হয়েছিল। আজ তারই হাত ধরে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে তালে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে পুরো পার্বত্য এলাকা। এসময় পার্বত্য মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আজকের এই পুরাতন বছর কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার সাথে সাথে পাহাড়ের প্রতিটা অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধ, ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ রূপান্তরের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবো। বান্দরবানে শনিবার সাংগ্রাইয়ের শোভাযাত্রা শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী একথা বলেন।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের জনসাধারণ উদযাপন করে সাংগ্রাইং উৎসব। প্রতিবছরের ১৩ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে কয়েক দিনব্যাপী পার্বত্য এলাকায় চলে এই উৎসবে আমেজ।
প্রতিবছরের মত মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসবকে ঘিরে শনিবার সকালে সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বান্দরবানের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় ও বাঙালি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরা বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। র্যালিতে অংশ নেয় মারমা, চাকমা, ¤্রাে, ত্রিপুরা, চাক সহ ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষসহ বাঙালি জনসাধারণ।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে র্যালিতে নেতৃত্ব দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় র্যালিতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: শফিউল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো: ইয়াছির আরাফাত, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশ, সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, সদস্য সিং ইয়ং ¤্রাে, সদস্য ¤্রাসা খেয়াং, প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে পার্বত্য এলাকায় নতুন বছরের আগের দিন মহাসমারোহে মারমা সম্প্রদায়ের এই সাংগ্রাইং উৎসবে যোগ দিতে পারায় মহা খুশি সকলে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে স্থানীয় রাজার মাঠে উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান। এসময় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা উপস্থিত থেকে এই উৎসবের আয়োজনে সামিল হয়। এসময় অনুষ্টানে বয়োজ্যেষ্ঠদের বরণ করে নেয় তরুণ তরুণীরা, আর এরপরই তাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে প্রদান করা হয় নানা রকম দানীয় বস্তু।
প্রতিবারের মত এবারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজাসহ নানা আয়োজন করতে পারায় খুশি আয়োজকেরা।
এদিকে পাহাড়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান স্বার্থকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিবারের মত ও আমরা এবারের উৎসবকে বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
মারমা সম্প্রদায়ের এই মাহা সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল বিকেলে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ এপ্রিল বিকালে মৈত্রি পানি বর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও সবশেষে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই মাহা সাংগ্রাইং পোয়েঃ উৎসবের।