প্রাক-প্রাথমিকের পরে এবছর নতুন করে প্রথম শ্রেণিতে মাতৃভাষায় কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে সরকার। ২০১৮ সাল থেকে সরকার এই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। প্রথম শ্রেণিতে এবার মাতৃভাষায় থাকবে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকায় পড়তে পারে মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রম এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৭ সালে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের জন্য সরকার নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। ১ জানুয়ারি বই উৎসবে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা ও শিখন চর্চা খাতা পায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা। প্রাক-প্রাথমিকে কোনো শিক্ষককে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া শুরু করে পাহাড়িদের মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। বই বিতরণের কয়েক মাস পর কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে কোনও মতে বছর শেষ করা হয় দায়সাড়াভাবেই।
পাহাড়ের শিক্ষাবিদদের মতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া শুরু করা হয়েছিল মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। তাদের মতে যেন দায় সাড়া শুরু করা। এছাড়া এ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করার ফলে সুফল পাওয়া কঠিন হবে মনে করছেন সংশিষ্টরা। তারা মনে করেন যেহেতু এবার প্রথম শ্রেণি শুরু করছে সরকার সেহেতু বই বিতরণের আগেই তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করা গেলে শিক্ষকরা মাঠ পর্যায়ে ক্লাশ শুরুর দিন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারতেন।
রাঙামাটি জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়- এবছর চাকমা ভাষায় ১০ হাজার ৬৫৩, মারমা ভাষায় ৩ হাজার ১০৮ ও ত্রিপুরা ভাষার জন্য ৭শত ৭০ জন মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক বই দেওয়া হবে। আর প্রথম শ্রেণির জন্য চাকমা ভাষায় ৭ হাজার ৩৮৫, মারমা ভাষায় ১ আটশত ৯৩, ত্রিপুরা ভাষার জন্য মাত্র ৬শতটি বই পাবে শিক্ষার্থীরা। আর গত বছর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা জন চাকমা ভাষায় ১০ হাজার ৮২, মারমা ২ হাজার ১৬৬ ও ত্রিপুরা ভাষায় জন্য ৫৮৩ জন।
শিক্ষাবিদ ও রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘এই কার্যক্রমটি শুরু করার আগে আরো প্রস্তুতির বিষয় ছিল বলে আমার মনে হয়। প্রস্তুতি না নিয়ে শুরু করা কতটুকু যৌক্তিক যারা শুরু করেছেন তারাই ভালো বুঝবেন। অনেক বিদ্যালয়েই প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। তাহলে তারা কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিখাবেন। আর যেহেতু প্রথম শ্রেণি চালু হয়েছে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করা গেলেই বছরের প্রথম দিন থেকেই শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় পড়তে পারতো।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘শুরু করতে হবে বলেই শুরু করা এমনটাই মনে হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকলে এই শিক্ষা কার্যক্রম দিয়ে শিশুদের পঙ্গু করে দেওয়ার মত অবস্থা হবে। কারণ যেখানে শিক্ষকরাই ভালো করে প্রশিক্ষিত না সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে শিখবে।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে চাকমা ভাষার জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রসন্ন চাকমা বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষকদের এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা না হলে জেলা পরিষদ ব্যাপকভাবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিতে পারবে না। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থাই করেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রওশন আলী জানান, ‘জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গত বছর ১০ উপজেলা মিলিয়ে আমরা ৩৬২ জনকে ১৪ দিন করে তাদের মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। এবছর ১০ উপজেলা মিলিয়ে ৭৬৩ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য জেলা পরিষদে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। যা আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে শুরু করতে পারবো বলে আশা রাখি।’