বিগত বছর বর্ষার প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা নিবিড় ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় শতাধিক যানমালসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে জেলা সদরের কয়েকটি পাড়ার ঘর-বাড়ি মাটির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ার লোকজন প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহন করেছিল। যারা আজ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে আছেন। এ বিপর্যয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে প্লাবিত হয়েছে শত শত একর ফসলী জমি ও ঘর-বাড়ি।
কিন্তু সেই দিন কি আমাদের মনে আছে? সেদিন বৃষ্টি শুরু হয়েছিল ১১ জুন রবিবার। টানা তিনদিন অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ জুন পর্যন্ত। ১২ এবং ১৩ জুন দু’দিনেই সব লন্ড-ভন্ড! ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছিল সেই বিপর্যয়ের দিন ও তারিখ।
গত বছর আর এ বছরের বর্ষার চমৎকার একটি মিল আমার মনে হলো। সেটা হলো কি জানেন? গত বছরের মত এ বছরও রীতিমত বর্ষা শুরু হয়েছে। তবে কখন জানেন? গত বছর শুরু হয়েছে ১১ জুন রবিবার। এ বছর শুরু হলো ৯ জুন শনিবার। দুই দিনের ব্যবধানে একই বর্ষা ও বারিধারা শুরু। দু’বছরের বর্ষার অনেকটাই কি চমৎকার মিল! এ বছর শুরু থেকে (সোমবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) টানা ৩দিন বৃষ্টি চলছে। রাঙামাটিসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোটা-খাটো পাহাড় ধসের খবরও পাওয়া গেছে। দু’টি বর্ষার সময়ে এতটুকু মিল অনেকটা চমকানোর মত! এখনও গ্রীষ্মকাল চলছে। বর্ষার ঋতু শুরু হয়নাই তারমধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটা বড় সংকেট পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে হয়। পাহাড়ে মাটির অস্থিত্ব আর আগের মত নেই। গাছ-গাছালি ধংস হওয়ার পর দীর্ঘদিন ডাঙ্গা ও মরু অবস্থা থাকায় এখন কিঞ্চিৎমাত্র মাটির আঁশ ও অস্থি নেই। ফলে পানি পেলেই তরলে পরিণত হয় মাটি। মাটির এ জীবন তাৎক্ষণিক আর ফিরে আনা সম্ভব নয়। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ চাষাবাদের জায়গা-জমি অপ্রতুল হওয়ায় নতুন করে গাছ রোপন করে মাটির জীবন ফিরিয়ে আনার সময় হারিয়ে গেছে সে অনেক আগে। যেহেতু গাছ রোপন করলেও মাটির জীবন ও অস্থিত্ব ফিরিয়ে আনা কয়েক বছর নয়, অন্তত পাঁচ-দশ বছরেও সম্ভব নয়। সুতরাং প্রতিটি বর্ষাই আমাদের জন্য হুমকিজনক। পক্ষান্তরে বিশ্বের নানা বাস্তবতার দরুন পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও অস্বাভাবিকও হতে পারে। হতে পারে ভূমিকম্প, বন্যা, প্রবল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত কিংবা অস্বাভাবিক বর্ষণে ভূমিধস ইত্যাদি। কিন্তু এসব দেখে এবং অভিজ্ঞতালাভেও আমাদের সচেতনতার শিক্ষা কি দেয়? আমার মনে হয় মোটেও নয়। তাছাড়াও নিজেদের দৈন্যতা এবং অসামর্থ্যরে কারণেও হয়তো বা আমাদের অজ্ঞতার পরিচয় বহন করতে হচ্ছে। তাই এসবের জন্য দরকার সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা। তা না হলে ভবিষ্যতে প্রকৃতির যে কোন বিপর্যয়ে আরও অনেককিছু হয়রান ও লোকসান দেখা দিতে পারে।
বিষেশ করে পাহাড়ের জন্য ভূমিধস একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান প্রাকৃতিক অবস্থা ও বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে আগামী পঞ্চাশ বছরে পাহাড়ে মাটি থাকবে না, থাকবে পাথরের স্তুপ! ত্রিশ ভাগ পাথর আর সত্তরভাগ মাটি থাকতে পারে কিনা সন্দেহ রয়েছে! সুতরাং সম্পদ রক্ষার্থে যথাসময়ে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
লেখক : পুষ্প মোহন চাকমা, গণমাধ্যমকর্মী,বিলাইছড়ি