শনিবার রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক চা চক্র অনুষ্ঠানে পার্বত্য রাঙাামটিতে সংগঠিত পাহাড় ধস প্রসঙ্গ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, এখনো পর্যন্ত পূনর্বাসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কাপ্তাই ও কাউখালীতে কিছু পরিবারের মাঝে টেউটিন বিতরণ করা হয়েছে এবং পূর্নবাসনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। অন্যদিক আরো যারা এখনো পর্যন্ত পূর্ণবাসন হয়নি তাদের জন্য চাহিদা মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বরাদ্ধ এলে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ শুরু করবো।
গত দুই দিনে টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২৭০ জন লোক অবস্থান করছে। আশ্রয় কেন্দ্রের অনেকে রয়েছে যারা একেবারে সর্ব্বহারা। আমি বিশ^াস করি না যাদের অবস্থা ভালো তারা আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের জন্য এসে ভির জমাবে। তিনি আরো বলেন, দুই মাস আশ্রয় কেন্দ্র চালানো অনেক কষ্ট সাধ্য কাজ। শুধু মাত্র তাদের থাকা বা খাওয়ানোটাই বড় নয়, এর সাথে চিকিৎসা সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে। আমরা হয়তো বেশি দিন এই আশ্রয় কেন্দ্র গুলো চালাবো না। পর্যাপ্ত বরাদ্ধ সহ পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পূর্ণবাসন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, গত দুই দিনের ভারি বর্ষণের কারণে আমরা শহরে মাইকিং করেছি। এছাড়া যারা পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার জন্য পুলিশ সুপার সহ কাউন্সিলার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে বলা হয়েছে। আসতে না চাইলে জোর পূর্বক আনার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ি দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু দুই দিনের ব্যবস্থাতেই আমরা তা ঠিক করতে সক্ষম হয়েছি। ঠিক তেমনি ভাবে বাজারে আমরা নজর রেখেছি। কোন ভাবে বাজারে দ্রব্যমূলের দাম বাড়াতে দেওয়া হবে না।
গত দুই দিনে বাঘাইছড়ি উপজেলায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলায় গত দুই দিনে প্রবল বর্ষণ এবং ভারতের পানি নেমে আসার কারণে বহু মানুষ পানিবন্ধি অবস্থায় আছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭-১৮ শত লোককে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কাপ্তাই হ্রদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড় ধসের ফলে কাপ্তাই হ্রদে তলদেশের উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। এই কারণে অল্প পানি বাড়লে নি¤œাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা ইতিমধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়া শুরু করেছি। কিন্তু পানি ছাড়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ কাপ্তাই হ্রদের পানি বেশি ছাড়লে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী সহ ন্মিমাঞ্চলে কৃত্তিম বন্যার সৃষ্টি হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেসিং করে নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। নয়তো শুকনো মৌসুমে ৪-৫টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
‘পাহাড়কে আগের রুপে ফিরানো যাবে না’ এমন মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে এর পরে পাহাড় গুলোকে আর আগের রুপে ফিরানো যাবে না। তবে এই পাহাড়কে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পনা করে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি এমন কোন ভবন বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে আমার কাছে সংবাদ নেই। তবে যে ভবন গুলোর মাটি সরে গিয়েছে তার মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রী খুবই আন্তরিক, তিনি ঈদের দিনেও রাস্তার পরিস্থিতি দেখার জন্য ছুটে এসেছেন। তাই আশা করছি যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, রাঙামাটি শালবন ছাড়াও শহরের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। শালবনে বেলি ব্রিজ করার পাশাপাশি শহরের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাও মেরামত করা হবে। তার পরেই ভারি যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক জানান, সরকার আমাদের সাথে রয়েছে। সরকার আমাদের প্রতি খুবই আন্তরিক। এই সমস্যা সমাধানের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার আমাদের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি।