ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা বলেছেন,‘ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) বর্তমানে দুটি ধারা, একটি আপোষহীন, আরেকটি আপোষকামী। ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পিসিপি আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই আদর্শিক সংগ্রামের পতাকাকে সমুন্নত রেখে আরো বেশি সুসংগঠিত হয়ে ছাত্র সমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।’
পিসিপি’র ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ মে ২০১৮) সকাল ১১টায় খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এইসব কথা বলেন।
‘মামলা-হামলা ভয়, প্রলোভনে ছাত্র সমাজকে আন্দোলন বিচ্যুত করা যাবে না’, ‘ চিহ্নিত চর দালাল-জাতীয়-বেঈমান বিভীষণদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে এসো ছাত্র সমাজ’ এই স্লোগানে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থঠিকাদার সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা।
এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা। সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বরুন চাকমা প্রমুখ। এছাড়া হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা সদস্য এন্টি চাকমা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
তিনি বলেন, ছাত্র সমাজকে প্রতিক্রিয়াশীল-সুবিধাবাদী ভূমিকা পালন করলে হবে না। প্রগতিশীল চিন্তাধারা লালনের মাধ্যমে সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন ও আদর্শিক কাজের মাধ্যমে আপোষকামী-সুবিধাবাদীদের পরাস্ত করতে হবে।
ছাত্র সমাজের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারাদেশে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে নানান দুর্বলতা ব্যর্থতা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে পুর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আপোষহীনভাবে সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তিনি পিসিপি’র গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বলেন, অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গসহ পিসিপি’র অনেক গৌরবোজ্জ¦ল ইতিহাস রয়েছে। আন্দোলনের ২৯ বছরে অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছে পিসিপি। বান্দরবানের অশুভ শক্তি প্রতিরোধ করতে গিয়ে লাল রিজার্ভ বম, খাগড়াছড়িতে মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ অমর বিকাশ চাকমা, বাঘাইছড়িতে সমর-সুকেশ-মনতোষসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে মহালছড়িতে নীতিশ চাকমা আত্মবলিদান দিয়ে আন্দোলনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায়-অবিচারের পিসিপি সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশে এবং বিশে^ নিপীড়িত মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে আপোষহীন ধারার পিসিপি বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত লাভ করেছে এবং ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করে পিসিপি’কে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু আপোষহীন হলে চলবে না, আদর্শিক ধারায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে। একজন কৃষক যেমন তার জমিতে ফসল ফলাতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে, তেমনি পিসিপি’কে আদর্শিক ও আপোষহীন লড়াইয়ের মাধ্যেমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন সরকার ও এখানে নিয়োজিত কতিপয় সেনা-প্রশাসনের কর্মকর্তারাই দায়ী। তারাই জুম্ম দিয়ে জুম্ব ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। জেএসএস সংস্কার-নব্য মুখোশদের প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে খুন, গুম, অপহরণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মিঠুন-অনাদি-অনল-কাথাং ত্রিপুরাসহ এ পর্যন্ত ১০জন ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী সমর্থককে হত্যার পর থানায় মামলা দায়ের করা হলেও প্রশাসন অপরাধীদের গ্রেফতার না করে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিভিন্ন মামলার আসামী শক্তিমান চাকমা ও মুখোশ বাহিনীর সর্দার সন্ত্রাসী তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌথ অভিযানের নামে জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। ইউপিডএফ সভাপতিসহ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় যে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আলোচনা সভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী-সমর্থককের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য ও জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা ও সেনাশাসন অবসানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)