
অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সড়কে নিখোঁজ ৪ জনের এখনো খোঁজ মেলেনি। অব্যাহত ভারি বর্ষণে সোমবারও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে রুমা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে। বৃষ্টির কারণে নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্বজনদের খোঁজে ঘটনাস্থলে ভিড় জমিয়েছেন নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনেরা।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, টানা ভারি বর্ষণে গত রোববার সকালে এগারোটায় বান্দরবান-রুমা সড়কের দলিয়ান পাড়া এলাকায় বিধস্ত ভাঙ্গা সড়ক পায়ে হেঁটে পার হওয়ার সময় পাহাড় ধসে পড়ে দুই বোনসহ ৫ জন নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। দুর্ঘটনার প্রায় চার ঘন্টা পর উদ্ধারকর্মীরা গত রোববার বিকালে মংশৈহ্লা কার্বারির ছোট মেয়ে চিংমে হ্লা (১৮) মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তারপর দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নিখোঁজ অপর ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিখোঁজরা হচ্ছেন- রুমা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস সহকারী মুন্নি বড়–য়া, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, ডাক বিভাগের কর্মচারী মো: রবিউল, এবং পাড়া কার্বারী মংশৈহ্লা’র বড়মেয়ে উমেচিং মারমা। স্বজনদের খোঁজে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে ভিড় জমিয়েছেন নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনেরা। পাহাড় ধসে বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
নিখোঁজ স্বাস্থ্য সহকারী মুন্নি বড়–য়ার ছোট ভাই রাহুল বড়–য়া ছোটন বলেন, পাহাড় ধসে নিখোঁজ রয়েছেন আমার বড়বোন মুন্নি বড়–য়া (৩৫)। সে রুমা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস সহকারীর চাকরি করেন। দু’দিন হয়ে যাচ্ছে আমার বোনকে উদ্ধার করা যায়নি। বাড়িতে ছোট্ট ভাগ্নি মায়ের জন্য কান্না করছেন।
পাড়া প্রধান মংশৈহ্লা কার্বারি বলেন, পাহাড় ধসে আমার দুই মেয়ে মাটি চাপা পড়েছে। ছোট মেয়ে চিংমে হ্লা (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু বড়মেয়ে উমেচিং মারমা’র এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোববার সকালে বান্দরবান যাবার পথে তারা পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্বিতীয়দিনের মত সোমবার সকালে নিখোঁজ চারজনকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টিতে পানির সঙ্গে নামছে পাহাড় ধসের মাটি। তারপরও জীবনের ঝুকি নিয়ে উদ্ধারকর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে ভারি বর্ষণে বান্দরবানে রুমা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সোমবারও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে জেলা শহরের কালাঘাটা, বালাঘাটা, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে পাহাড় ধসের ঝুকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সকাল নয়টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘন্টায় বান্দরবানে ২০১ মি:মি: বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে গত রোববার সকাল নয়টা থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২৩ মি: মিটার। আজও ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা আরো বাড়ছে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, পাহাড় ধসে নিখোঁজ ৪ জনের মৃতদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অব্যাহত ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে প্রানহানির শঙ্কা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্র্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।