ইয়াছিন রানা সোহেল
আর কোন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান এত সংক্ষিপ্ত সময়ে এতবার পাহাড়ে আসেননি,অথচ তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছিলেন তিনবার ! পার্বত্য চট্টগ্রাম আর এই জনপদে বসবাস করা মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিলো তার হৃদয়জুড়ে। তিনি আর কেউ নন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালি জাতির প্রাণ পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আগষ্টে ভয়াবহ হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার দুইমাস আগেই রাঙামাটি ঘুরে গিয়েছিলেন তিনি। পাহাড়সম ব্যক্তিত্বের এই মানুষটির পাহাড়ের মানুষের প্রতি বিপুল ভালোবাসা টের পাওয়া যায় নানান কাজেও।
বোঝা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে কিভাবে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। রাত দিন পরিশ্রম করেছেন, যাতে দ্রুতই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারেন। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রায় নিয়মিতই দেশের কোনো না কোনো জেলা-থানা সফর করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছেন তিনবার। ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম তিনি রাঙামাটি সফর করেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ জুন রাঙামাটি সফর করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বল্প সময়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া লোকজনদের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর গৃহীত সেসব পদক্ষেপ থেকেই বোঝা যায় তিনি কত উদার আর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহান নেতা ছিলেন। একইসাথে পাহাড়বাসীর প্রতি তাঁর দরদ এবং মমত্ববোধও ফুটে উঠে।
নির্বাচনী সফরে রাঙামাটিতে প্রথম বঙ্গবন্ধুর সফর
স্বাধীন দেশের প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। নির্বাচনী সফরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মত রাঙামাটি সফর করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথমবারের রাঙামাটি সফর নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য দলে দলে লোকজন আসতে থাকে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে। চাঁদের গাড়িতে করে, কেউবা বাসে চড়ে আবার অনেকেই পায়ে হেঁটে দূর-দূরান্ত থেকেও সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। জলপথে লঞ্চ, স্টিমার, দেশি নৌকা ও সাম্পানযোগেও আসেন অনেকে। বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য সেদিন মাঠ ভরপুর হয়ে লোকজন রাস্তায় এমনকি অনেকে গাছের ওপরেও উঠে বসে। বসন্তের মাতাল হাওয়ায় যেনো খুশির আনন্দও মিশে একাকার হয়েছিল। আর তাইতো সকল ধর্মের ও পাহাড়ে বসবাসরত সকল জাতিগোষ্ঠীর সব বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে রিজার্ভ বাজার জুড়ে। এই যেন মানুষের উৎসবের বড় মিলনমেলা।
রিজার্ভ বাজারের পার্কের উত্তর পাশের্^ (বর্তমানে শহীদ আবদুল আলী একাডেমি ও স্কাউট ভবনের সামনে) বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। দুপুরের আগেই জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান হেলিকপ্টারযোগে পদার্পণ করেন রাঙামাটিতে। রাঙামাটি কোর্ট বিল্ডিং মাঠে (বর্তমানে শহীদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়াম) বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। রাঙামাটির মাটিতে জাতির পিতার পা যখন পড়ে আর তখনই ‘জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু হাত নেড়ে সবার অভিবাদনের জবাব দেন। এদিন ৫০ জন শিশুর অগ্রগামী একটি দল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আবছার এবং উত্তরা রায় বঙ্গবন্ধুকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বঙ্গবন্ধু শিশুদের আদর করেন। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বঙ্গবন্ধুকে বরণ করে নেন। এরপর তিনি মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা নোয়াব আলী, সৈয়দুর রহমান, চারু বিকাশ চাকমা, মুন্সী মিয়া, নজির আহমদ তালুকদার, আলতাফ হোসেন, মোঃ জাকারিয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মঞ্চের আশেপাশে সিকিউরিটি ফোর্স ছাড়াও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, দেশের সকল মানুষ সমান এবং সকলেরই সমানাধিকার রয়েছে। সকলেই বাংলা মায়ের সন্তান। বঙ্গবন্ধু এই মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন যে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে কাউকেই শোষণ করতে দেওয়া হবে না। তিনি রাঙামাটি, ফেনী, ও লক্ষ্মীপুরের তিনটি বিরাট জনসভায় ভাষণ দেবার সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের যে কোন এলাকারই মানুষ হোক না কেন, সকলেই সমান এবং তিনি সকলকেই সমানভাবে ভালবাসেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম রাঙামাটি সফর
১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম রাঙামাটি সফর করেন। যদিওবা এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় সফর। এই সময় জাতির পিতাকে বরণে ও তাঁর সম্মানে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। কক্সবাজার থেকে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারযোগে রাঙামাটিতে আগমন করেন। এদিনও বঙ্গবন্ধুকে দেখার ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটে। পুরো শহর যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।
বঙ্গবন্ধু বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগে রাঙামাটি কোর্ট বিল্ডিং মাঠে (বর্তমান শহীদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়াম) অবতরণ করেন। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে মাল্যভূষিত করে অভ্যর্থনা জানান দুজন শিশু। এরপর অভ্যর্থনা জানান আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হন তিনি। পরিচয় পর্ব শেষে গাড়িতে ওঠার আগে বঙ্গবন্ধু সকলকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ালেন। সাথে সাথে বিপুল জনতা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা দীর্ঘজীবী হোক ধ্বনি দিয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বহর সার্কিট হাউজ যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ কিঃমিঃ সড়কে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে প্রায় দুই ডজনের মত অপরূপ তোরণ করা হয়। নারী-পুরুষ তাঁকে জানায় প্রাণঢালা স্বাগত আর রাস্তার দুপাশ থেকে চলতি গাড়ির ওপর হতে লাগলো পুষ্পবর্ষণ। বঙ্গবন্ধু অভিনন্দনের জবাব দিলেন হাত নেড়ে। প্রতিটি জায়গায় স্কুলের ছেলে মেয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আর জাতির পিতাকে দেখে আনন্দ নৃত্য করছিল। সাথে সাথে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা দীর্ঘজীবী হোক ধ্বনি দিচ্ছিল। পথে পথে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও মুরং নাচ ও দেশাত্ববোধক সঙ্গীতের আয়োজন ছিল। এদিন বঙ্গবন্ধু কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ করেন। সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতির সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন সার্কিট হাউজে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন।
রাঙামাটিবাসির ভালবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধু
১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয়বারের মত রাঙামাটি সফর করেন। এই সময় জাতির পিতাকে বরণে ও তাঁর সম্মানে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। কক্সবাজার থেকে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারযোগে রাঙামাটিতে আগমন করেন। এদিনও বঙ্গবন্ধুকে দেখার ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটে। পুরো শহর যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।
বঙ্গবন্ধু বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগে রাঙামাটি কোর্ট বিল্ডিং মাঠে (বর্তমান শহীদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়াম) অবতরণ করেন। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে মাল্যভূষিত করে অভ্যর্থনা জানান দুজন শিশু। এরপর অভ্যর্থনা জানান আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হন তিনি। পরিচয় পর্ব শেষে গাড়িতে ওঠার আগে বঙ্গবন্ধু সকলকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ালেন। সাথে সাথে বিপুল জনতা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা দীর্ঘজীবী হোক ধ্বনি দিয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বহর সার্কিট হাউজ যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে প্রায় দুই ডজনের মত অপরূপ তোরণ করা হয়। নারী-পুরুষ তাঁকে জানায় প্রাণঢালা স্বাগত আর রাস্তার দুপাশ থেকে চলতি গাড়ির ওপর হতে লাগলো পুষ্পবর্ষণ। বঙ্গবন্ধু অভিনন্দনের জবাব দিলেন হাত নেড়ে। প্রতিটি জায়গায় স্কুলের ছেলে মেয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আর জাতির পিতাকে দেখে আনন্দ নৃত্য করছিল। সাথে সাথে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা দীর্ঘজীবী হোক ধ্বনি দিচ্ছিল। পথে পথে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও মুরং নাচ ও দেশাত্ববোধক সঙ্গীতের আয়োজন ছিল। এদিন বঙ্গবন্ধু কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ করেন। সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতির সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন সার্কিট হাউজে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন করতে আবারো রাঙামাটি সফর করেছিলেন। এদিন বঙ্গবন্ধুর সম্মানে স্থানে স্থানে অভিনন্দন লেখা তোরণ নির্মাণ করা হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বহরে ফুলবর্ষণ করে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানায়। বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের গেইটে প্রবেশের সময় হাতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এতে বঙ্গবন্ধু বেশ পুলক অনুভব করেছিলেন। উপগ্রহ ভু-কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারযোগে কাপ্তাই গমন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন হেলিকপ্টার যোগে কাপ্তাই আসেন তখন হাজার হাজার উৎসুক জনতা এক নজর বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর বাহন হেলিকপ্টারটি বক্সহাউসের পাশে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে পিডিবিতে গভর্নর হাউসে (বর্তমানে বিদ্যুৎ ভবন) প্রবেশের আগে রাস্তার দুই পাশে অপেক্ষমান হাজার হাজার জনতাকে হাত নেড়ে অভ্যর্থনার জবাব দেন। এসময় বঙ্গবন্ধুকে হাতি দিয়ে অভিবাদন জানানোর আয়োজন করেন কাপ্তাইয়ের তৎকালিন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আবদুস শুক্কুর। রাস্তার দুই পাশে হাতি দাঁড় করিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দেয়া হয়। হাতির অভিবাদন দেখে বঙ্গবন্ধু বেশ আনন্দিত হয়েছিলেন।
রাঙামাটিতে বঙ্গবন্ধুর শেষ সফর
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু আবারো রাঙামাটি সফর করেন। তবে এই সফর ছিল রাঙামাটিতে তাঁর জীবনের শেষ সফর। বঙ্গবন্ধু এদিন দেশের প্রথম উপগ্রহ ভুÑকেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য জেলার বেতবুনিয়া সফর করেছিলেন। বর্হিবিশ্বের সাথে টেলিযোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দেশের প্রথম উপগ্রহ ভু-কেন্দ্র স্থাপিত হয় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মধ্যবর্তি বেতবুনিয়ায়। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ ভু-কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য রাঙামাটির বেতবুনিয়া সফর করেন। সাধারন লোকজন এদিনও বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য বেতবুনিয়ায় ভীড় করেন। বঙ্গবন্ধুকে বরণে বেতবুনিয়াবাসীরও আয়োজনের কমতি ছিল না। বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধনের আগে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও বেতার মন্ত্রী কোরবান আলী,রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার মোহাম্মদ বয়েতুল্লাহ, ডাক, তার ও টেলিফোন প্রতিমন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, হুইপ মোহাম্মদ হানিফ,কানাডীয় হাই কমিশনার, কুটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বাকশাল নেতৃবৃন্দ ও পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এরপর সুইচ টিপে উপগ্রহ ভু-কেন্দ্র উদ্বোধন করেন এবং পরিদর্শন করেন। এসময় রাঙামাটি জেলার আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়া, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু সুইচ টিপে উপগ্রহ ভু-কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন এবং লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনারের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীও কথা বলেন। তাঁদের কথোপকথন মাইকের মাধ্যমে লোকজনদের শোনানো হয়। জাতির জীবনের এই ছিল এক অবিস্বরনীয় দিন। বঙ্গবন্ধু এদিন বিকেলে তিনি কাপ্তাই যান এবং সেখানে দুই রাত অবস্থান করেন। ১৬ জুন তিনি ঢাকা ফিরে যান।
রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা বরাবরই ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। পুরো দেশের সার্বিক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। দিনরাত পরিশ্রম আর কাজের চাপে সম্ভবও হয়না দেশ ঘুরে ঘুরে দেখা। আর আজ থেকে ৪৫-৫০ বছর আগে যোগাযোগ এত সহজও ছিলোনা পাহাড়ের সাথে রাজধানীর। কিন্তু ভেবে বিস্ময় জাগেও,সেই কঠিন সময়েও যুদ্ধবিধ্বস্ত বিপন্নতায় আর ঘরে-বাইরে অজ¯্র শত্রুবেষ্টিত থেকেও একজন মহামানব পাহাড়ে ছুটে এসেছেন সাড়ে তিনবছরে তিনবার! কী ভীষণ ভালোবাসলে পাহাড়ের মানুষকে, এত স্বল্পসময়ে এতবার আসা হয় !