জিয়াউল জিয়া ॥
স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, আমাদের টার্গেট হলো বাংলাদেশে কোন রক্তপাত ও চাঁদাবাজি হতে দিব না। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানের জঙ্গি দমন করেছি, সন্ত্রাসীদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছি। সেখানে এই তিন জেলায় কেন এতো রক্তপাত হবে। পাহাড়ের অনেক এলাকায় আমি ঘুরে দেখেছি এলাকার মানুষ খুবই সাধারণ। এখানকার মানুষের কোন চাহিদা নেই এবং খুবই শান্তিপ্রিয়। তাহলে কেন এই রক্তপাত? আমরা ওয়াদা করছি আমাদের পুলিশ বাহিনী আপনাদের পাশে থাকবে সব সময়। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সাথে জড়িত তাদের আমরা আইনের মুখোমুখি করবো আইনে মাধ্যমে তাদের শান্তি নিশ্চিত করা হবে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ও রক্তপাত-চাঁদাবাজি বন্ধে যা করার প্রয়োজন সবই করবো আমরা। এই পাহাড় সম্ভাবনাময়ী এলাকা, যেটা আমরা চিন্তা করছি সেটা বানিয়ে আমরা দেখিয়ে দিব পৃথিবীকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটি নিউ পুলিশ লাইন্সে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান হেডকোয়াটার্স ও ক্যাম্প এবং রাঙামাটিতে ডিআইজি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অফিসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, এই এলাকার প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন, তাই চুক্তির শর্ত অনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় প্রত্যাহারকৃত ২৩৮ সেনাক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানস্্ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। আর এর মাধ্যমে এই এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকাবে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির নেতা সন্তু লারমা আমাদের বড় ভাই ও এখানকার স্থানীয় নেতাদের সাথে গতকাল(বুধবার) দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। কিছু সমস্যা রয়েছে, যা আলোচনার মাধ্যমে আমরা সামাধান করবো।
অনুষ্ঠানে জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, পুলিশের মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, ‘চুক্তি হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে, চুক্তিতে ৭২টি ধারা ও ৯৯টি উপধারা হয়েছে। সেই চুক্তিতে সরকারের জন্য পালনযোগ্য সবগুলো আর চুক্তি স্বাক্ষরকারী অপর পক্ষের জন্য পালনযোগ্য মাত্র দুটি ধারা। ঘ খন্ডের অনুচ্ছেদ ১৩ ও ১৪ তে বলা আছে সকল অস্ত্র জমা দিবে এবং সকলে আত্মসমর্পন করবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয় সেটা হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি যুদ্ধ করতে চান, আসুন যুদ্ধ করি। আসুন, বলুন, স্থান ঠিক করি। আপনারা ৩০ মিনিট টিকে থাকতে পারবেন না। পাহাড়ে পাহাড়ে লুকিয়ে থাকবেন, মানুষের বাড়িতে গিয়ে জোর করে ভাত খাবেন, রাতে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লুকিয়ে আমাদের দেখে গুলি করে আহত করবেন। এটাকে যুদ্ধ বলে না। এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম।’
পুলিশের মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, গত পাঁচ বছরে পাহাড়ে ১৩৫ জন মানুষ খুন হয়েছে, যা গড়ে প্রতি দুই মাসে ৫ জন। তিন জেলায় ১৬ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। আর পুরো দেশে ১৮ কোটি মানুষ বসবাস করে। সরকার যদি দেশের একটি বড় অংশে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারে, তাহলে এই পার্বত্য এলাকায় কেন পারবে না। আমি সন্ত্রাসীদের সব সময় বলি জনগন ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা যারা অবজ্ঞা করার সাহস দেখায় তারা আহম্মক। রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে এই সব অপশক্তি তুচ্ছ। সকলের সহযোগিতা নিয়ে এইসব লোকদের খুজে বের করবো এবং শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। দুই দশকের পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু চুক্তির কয়েক বছর যেতে না যেতেই পাহাড়ে আবারো শুরু হয় রক্তপাত। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের মাধ্যমে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠে পাহাড়। একটি আঞ্চলিক সংগঠন বিভক্তি হয়ে বর্তমানে চারটি সংগঠন সৃষ্টি হয়। আর এই চার সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়শ পাহাড়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে পাহাড়ে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলোর স্থলে এপিবিএন ক্যাম্প স্থানের কার্যক্রম শুরু করলো সরকার,যা পার্বত্য চুক্তিতেই আছে।