পৌষ মাসের এখনও সপ্তাহখানেক বাকী। এরমধ্যেই বেশ শীত পড়ছে। রাত নামলেই শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়। বেশ অনুভূত হয়। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে একটু অস্বস্তিতে পড়েন সবাই। এদিকে ক’দিন ধরে শীত বেড়ে যাওয়ায় একটু আগেভাগেই গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। নতুন-পুরাতন উভয় ধরণের কাপড়ের দারুণ চাহিদা রয়েছে। শীতের আনুষ্ঠানিক আগমনবার্তায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির বিভিন্ন বিভিন্ন বাজারে পুরাতন গরম কাপড়ের ব্যবসাটা বেশ জমজমাট হতে শুরু করেছে।
গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে পুরাতন গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে এর মূল ক্রেতা হচ্ছে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলো। কেউ নিজের জন্য, কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য, আবার কেউবা দান করার জন্য গরম কাপড় কিনছেন। পুরাতন কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন এই সেক্টরের ব্যবসায়ীরাও। বেচা-বিক্রি আগের চেয়ে বৃদ্ধির কারণে বেশ স্বস্তিতে আছেন ব্যবসায়ীরা।
শীতের তীব্রতায় অত্যন্ত প্রয়োজন একটি গরম কাপড়। সচ্ছল মানুষের মধ্যে একটু ভালো বা নতুন ডিজাইনের পোশাক কেনা হলেও, নিম্ন আয়ের মানুষের অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তাদের কাছে শীত উপশম করাই মুখ্য বিষয়। কাপড়ের মান বা দাম বলে কিছু নেই। যতো অল্পতে ভাল কাপড় তারা কিনতে পারেন, তাঁরা সেদিকেই ছুটেন। আর পাহাড়ি জনপদে অল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। সে হিসেবে বিভিন্ন ফুটপাতে, দোকানে বিক্রি হওয়া পুরাতন গরম কাপড়ই তাদের প্রধান লক্ষ্য। দাম সাধ্যের কাছাকাছি হওয়ার কারণে একটু সস্তায় গরম কাপড়ের চাহিদা পূরণের অন্যতম উৎস হচ্ছে এসব জায়গা।
পুরাতন কাপড়ের মধ্যে সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, গরম টুপি, ছোট ও বড়দের ব্লেজার, বিভিন্ন ডিজাইনের মাফলার বিক্রি করা হয়। লোগাং বাজার, পানছড়ি সদর বাজার, কুড়াদিয়া ছড়া, ভাইবোন ছড়া বাজারে এই ধরনের কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দামও খুব সাধ্যের মধ্যে। বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট, ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মোটা গেঞ্জি, সোয়েটার, চাদর পাওয়া যায় ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যেই।
ভাসমান বিক্রেতা কামাল, খলিল বলেন, ‘এগুলো যদিও পুরান, তবে মানে ভালো। আপনি একটু খোঁজ করলেই পছন্দমতো জিনিস পেয়ে যাবেন। দামও কম। এসব কাপড় পুরান হলেও বেশ আরামদায়ক।’
ব্যবসায়ী বাচ্চু বলেন, ‘খোঁজ করলে এখানে ভালো কাপড় পাওয়া সম্ভব। কম দামের ভালো কাপড় কেনার জন্য এরচেয়ে ভালো কিছু বিকল্প নেই।’
মরাটিলার আশা ত্রিপুরার সাথে তবলছড়ি রোডে নাপ্পি পট্টি মোড়ে কথা হয়। ৮০ টাকায় কিনেছেন একটি গরম কাপড়। তিনি সেটি দেখিয়ে বলেন, ‘যা কামাই করি, ঐটাকা দিয়ারে দামী গরম কাপড় কিনতে পারি না। শীত কমানোর জন্য এটা অনেক কাজে দিবে।’ একই ধরনের মন্তব্য আরেক ক্রেতা ফরিদ। পেশায় কৃষক। তিনি বলেন ‘কাপড়ের আর ভালো মন্দ কি, শরীর গরম হইলেই হইলো। সস্তা এর চেয়ে ভালো পাওন যায় না।’
ভাসমান বিক্রেতা খলিল বলেন, এই সব পোশাক কিনতে প্রতি পিস খরচ হয় মানভেদে ৩০ থেকে ১২০ টাকা। মাঝেমধ্যে দাম বাড়তিও হয়। আমরা প্রতি কাপড়ে ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকি। অনেক সময় পুরাতন কাপড় কিনে ইস্ত্রি, ওয়াশ করতে হয় বলেও জানান তিনি।
শুধু পুরুষরাই নয় মহিলা, ছেলেমেয়ে, বয়োবৃদ্ধদেরও আস্থা এই কাপড়ে। ১৪ বছরের থুইসেসিং মারমা। মায়ের সাথে এসেছে বাজারে। মা নিজের জন্য এবং আদুরে ছেলের জন্য কিনলেন পোশাক। সব মিলিয়ে খরচ ২৭০ টাকা। অল্পতেই তুষ্ট তিনি।
চট্টগ্রামের, খাতুনগঞ্জে, নিউমার্কেট, জহুর মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ, রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ ও পুরান ঢাকায় এই পুরাতন কাপড়ের বড় বাজার রয়েছে। এসব স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পুরাতন কাপড়ের গাঁট কিনে আনেন। ব্যবসায়ী যদি পরিচিত পুরনো ক্রেতা হয়, চাহিদা দিলে সে’ক্ষেত্রে পণ্য পাঠিয়ে দেয়।
পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গত কয়েক বছর বিভিন্ন কারণে একটু লস হয়েছে। এবছর সেটা পুষিয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত কাপড় আর আমদানির কাপড়ে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে বলেও জানালেন ব্যবসায়ীরা।