নিজস্ব প্রতিবেদক
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু (বৈসাবি)। চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলা পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এই উৎসব পালন করা হয়। প্রতিবছর এই সময়ে বৈসাবির আমেজে পাহাড়ি জনপদের পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে উৎসবে মুখরিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মতো এবারো রাঙামাটিতে বিঝু, সাংগ্রাই, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু-২০২১ উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও এসব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। তাই এবারও আনুষ্ঠানিকভাবে হচ্ছে না বৈসাবি র্যালি ও ফুল ভাসানো উৎসব।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই উৎসবের অন্যতম দিক হলো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, পাহাড়ি নৃত্য, গান, অতিথি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, পারস্পরিক স¤প্রীতি ও সংস্কৃতিকে লালন ও পালন করা। গত বছর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বৈসাবি উৎসব ম্লান হয়ে যায়। তবে এই বছর উৎসবে বাড়তি আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের আশা ছিল পাহাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু শেষাবদি তাও হলোনা।
মূলতঃ ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসু, মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিঝু ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিষু নামের এই উৎসবকে একসঙ্গে বৈসাবি আখ্যায়িত করা হয়। উৎসবের প্রথম দিন চাকমারা ফুলবিঝু, দ্বিতীয় দিন মূলবিঝু, তৃতীয় দিন গোজ্যেপোজ্যে দিন। মারমারা প্রথমদিন পাইংছোয়াই, দ্বিতীয় দিন সাংগ্রাইং আক্যা, তৃতীয় দিন সাংগ্রাইং আপ্যাইং। ত্রিপুরাদের প্রথম দিন হারিবৈসুক, দ্বিতীয় দিন বৈসুকমা, তৃতীয় দিন বিসিকাতাল নামে এই উৎসব পালন করে। এভাবে প্রত্যেক বছর আনন্দ-উৎসবে পালিত হয়ে আসছে উৎসবটি।
বিঝু, সাংগ্রাই, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু-২০২১ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেছেন, অন্যান্য বছর আমরা উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে এই উৎসব পালন করি। কিন্তু করোনার প্রভাব ও সরকারি নির্দেশনায় জনসমাবেশ হবে এমন অনুষ্ঠান আমরা স্থগিত করছি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে যার অবস্থান থেকে ঘরোয়া পরিবেশে উৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে। তবে শহর এলাকা ও গ্রামাঞ্চল আলাদা। শহর এলাকায় ঘনবসতি ও করোনার প্রভাবও বেশি। তাই গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবের আয়োজন চলছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাই, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু উৎসব পালন করা হয়। আর এই উৎসব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ৯ এপ্রিল থেকে উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে র্যালিসহ বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১২ এপ্রিল সকালে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে নববর্ষের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে পাহাড়িরা। এই উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।