চুক্তি বাস্তবায়নে ‘ষোলআনা অসৎ’ ইচ্ছের কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না মন্তব্য করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম জাতিকে অধিকতর আন্দোলনে লড়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের শাসকগোষ্ঠীর সাথে যারা লেজুড় ভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চাইছে এবং তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সময় হয়েছে। সেনাবাহিনী, সরকারের আমলাবাহিনীর শোষণ, দমন আরো সীমাহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে।’ শুক্রবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জুম্ম জনগণের মহান নেতা ও নিজ বড় ভাই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাঙামাটি জেলা জেএসএস আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, এমএন লারমা হত্যাকান্ডের পিছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। এতে করে তারা চেয়েছিল জেএসএসকে চিহ্ন করা এবং তাদের শাসন কায়েম করা। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তি সমাধানে লক্ষ্যকে সামনে রেখে চুক্তি সম্পাদন করেছে। আমরা সেখানে স্বাক্ষর করেছি এবং সরকারও স্বাক্ষর করেছে কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারছে না বা সরকার করছে না।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত জুম্ম জাতিগোষ্ঠী স্বাধিকার লাভ করবে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম জাতিকে আরো লড়ে যেতে হবে, কেননা চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া কোন গতি নেই।’
জেএসএস’র রাঙামাটি জেলা সভাপতি সুবর্ণ চাকমা’র সভাপতিত্ত্বে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, জেএসএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কল্পনা চাকমা, বিশিষ্ট আদিবাসী সংগীত শিল্পী রণজিৎ দেওয়ান, রাঙামাটি জেলা যুব সমিতির সভাপতি অরুণ ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন মারমা।
শুক্রবার সকাল আটটায় প্রভাতফেরীর মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। জেলার শিল্পকলা থেকে প্রভাত ফেরী বনরূপা হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমি গিয়ে শেষ হয়। প্রভাত ফেরি শেষে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পমাণ্য অর্পণ শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জুম্ম জাতীয় শোক দিবস হিসেবে এ দিবসটি পালন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের এই দিনে একদল বিভেদপন্থীর হাতে আট সহযোদ্ধাসহ নিহত হন এমএন লারমা। এছাড়াও তিনি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত প্রথম সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের সংবিধানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন এমএন লারমা। এরপর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির ইটছড়িতে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন ‘শান্তি বাহিনী’। যার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে।
1 Comment
SOTU LARMA IS BIG CRIMINA PABOTTOW