ডেস্ক রিপোর্ট ॥
উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি) ২০ উপজেলায় ৬৪টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন জেলার জেলা প্রশাসকের দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি জেলার জেলা প্রশাসকরা বুধবার আদালতে এভিডেভিট আকারে প্রতিবেদন দাখিল করে জানান, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২, কাপ্তাই উপজেলায় ১, লংগদু উপজেলায় ৩, রাজস্থলি উপজেলায় ৩টি এবং কাউখালি উপজেলায় ১৬টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি, রাঙামাটি সদর, বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর উপজেলায় কোনো ইটভাটা নেই মর্মে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলায় ২, লামা উপজেলায় ৩ এবং লাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় সদর উপজেলায় ৫টি, মাটিরাঙা উপজেলায় ৬, পানছড়ি উপজেলায় ৩, দীঘিনালা উপজেলায় ২, মহালছড়ি উপজেলায় ৩, মানিকছড়ি উপজেলায় ১, রামগড় উপজেলায় ৯, গুইমাড়া উপজেলায় ৫টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ মার্চ দিন ধার্য করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এর আগে ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাতদিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। লাইসেন্স ছাড়া এই তিন জেলার ইটভাটা পরিচালনা, পাহাড় কেটে মাটি ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার এবং বনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মর্মে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এই রিট করে।
রিটে আবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় স্থাপিত ইটভাটাগুলো লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পাহাড় কেটে মাটি ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ও বনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রিটের শুনানি হয় গত ২৫ জানুয়ারি। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এইচআরপিবি’এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুনানি শেষে তিন জেলার সকল অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে তিন জেলার লাইসেন্সবিহীন সকল ইটভাটার তালিকা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ক্রমাগতভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলো। ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এতে পাহাড় তার আপন পরিবেশ ফিরে পাবে, প্রকৃতি পাবে নিজস্ব ভারসাম্য।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, একটা রিটের প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের সকল ইটভাটা অবৈধ ঘোষণা করে সাত দিনের মধ্যে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশনা হাতে পৌঁছার পরপরই ইটভাটা বন্ধের অভিযান শুরু করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে জেলার ৯টি উপজেলার ৩৩টি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।