সৃজনশীল দূরদর্শী চিন্তাভাবনা আর তা কাজে লাগানোর সৎ সাহস, লেগে থাকার মানসিকতা, যেকোনো উদ্যোগ-কর্ম প্রয়াসকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। এমনই একটি কর্ম প্রয়াসের ফল মায়াবিনী। পাহাড়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, মানুষের হাতে তৈরি এই অনিন্দ্যসুন্দর ‘মায়াবিনী লেক’।
এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য, স্পিড বোট ও নৌকায় চড়া, কায়াকিং সুবিধা, মাছ ধরা ও লেকের পাশে মাচায় বসে আড্ডা দেয়ার সুব্যবস্থা থাকায় লেকটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যাডেল বোটে করেও লেকে ভ্রমণ করা যায়। বাঁশের বানানো তিনটি সেতু পার হয়ে যাওয়া যায় সেই লেকের দ্বীপের মতো বিভিন্ন অংশে। আম, বাঁশ, সেগুন ও গামারি গাছে ঘেরা লেকটি। রয়েছে মেঠো পথ। দিগন্তবিস্তৃত খোলা আকাশের নিচে বসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার সুবিধার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রয়েছে হালকা খাবারের দোকান ও বিশ্রামাগার।
২৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমিতির অধীনে মূলত মাছ চাষের জন্য মায়াবিনী লেকটি তৈরি হয়েছিলো। চারদিক উঁচু-নিচু পাহাড়ের নিচের অংশে বাঁধ দিয়ে তৈরি এটি। মাছ চাষের পাশাপাশি সৌন্দর্য ও অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয়ের উদ্যোগ নিয়ে ঢেলে সাজানো হয়। যোগ করা হয় বিনোদন সুবিধা, যা জেলার পর্যটনশিল্পে নজরকাড়া বাড়তি মাত্রা যোগ করে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে, উঁচু-নিচু ৪০ একর জমির ওপর ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত মায়াবিনী লেকটির রয়েছে অপার সম্ভাবনা। যার ফলে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরামর্শ, সহায়তা পাচ্ছেন পায় লেকটির উদ্যোক্তারা। বর্তমানে এটি এই জেলার বিনোদন প্রিয় মানুষের অবসর সময় কাটানোর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। জেলার বাইরের পর্যটক সমাগমও দিনদিন বাড়ছে। বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের ঢল নামে।
একতা মৎস্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে গড়ে উঠা লেকটি, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের কংচাইরী পাড়ায় অবস্থিত। এর অন্যতম দেখভালকারী সদস্য অংহ্লাপ্রু মারমা। তিনি বলেন, ‘একতা মৎস্য সমবায় সমিতির মায়াবিনী লেক, এই এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিসহ নানামুখী অবদান রাখছে। একটি সুস্থধারার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও এটিকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে পানছড়ি উপজেলার পথে, ভাইবোনছড়া হয়ে মায়াবিনী লেক মাত্র ২০-২৫ মিনিটের পথ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। চেঙ্গি স্কোয়ার ও স্বনির্ভর বাজার থেকে মটর সাইকেল, সিএনজি, মাহিন্দ্র, পিক আপ ইত্যাদিতে করে সরাসরি মায়াবিনীতে যাওয়া যায়। ভাড়া ৩০-৬০ টাকা। মায়াবিনীতে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। নৌকা, প্যাডেল ও কায়াকিং বোট ভাড়া আধঘণ্টা ২০-৫০ টাকা।
খাগড়াছড়ি থেকে সপরিবারে মায়াবিনী লেকে ঘুরতে আসা পর্যটক কোহিনুর রাণী বলেন, ‘পারিবারিক ভ্রমণের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। ভাইবোনছড়া হয়ে মায়াবিনীতে আসার পথে পাকা ব্রিজটিও ভালো লেগেছে। চারপাশও দারুণ সুন্দর। জেলা সদরের বাইরে এমন একটি পরিচ্ছন্ন পর্যটন কেন্দ্র যেকোনো পর্যটকেরই মন মাতাবে। সুস্থ ব্যবস্থাপনা ও একটি ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এর অভাব বোধ করেছি।’