পানছড়ি প্রতিনিধি
সোমবার সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একটিতে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জিতেছে। একটি ইউনিয়নের দুইটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ (স্থগিত) করায় ওই ইউনিয়নের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা যায়নি। সোমবার রাতে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা রিকল চাকমা, (পানছড়ি সদর, লতিবান, উল্টাছড়ি) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা (লোগাং ও চেঙ্গী) মো. নাজমুল ইসলাম মজুমদার।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ১ নং লোগাং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় কুমার চাকমা (অটো রিকশা) ৩৯০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সমর বিকাশ চাকমা (আনারস) ২৮০৪ ভোট পেয়েছেন। ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নে চেয়ারমান পদে আনন্দ জয় চাকমা মোটর সাইকেল প্রতীকে ১৪৬০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিহার বিন্দু চাকমা পেয়েছেন আনারস প্রতীকে ১২৮০ ভোট।
৩ নং পানছড়ি সদর ইউনিয়নে ৫ নং ওয়ার্ডের দুটি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও ৮ ওয়ার্ডের পাইলট ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা (ভোট স্থগিত) করা হয়েছে। মোট ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রের ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী উচিত মনি চাকমা আনারস প্রতীকে ৫৬৪৩ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নাজির হোসেন (নৌকা) ৪৪১৯ পেয়েছেন ভোট। বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৪৬২৮।
৪ নং লতিবান ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ভূমি ধর রোয়াজা (চশমা)। তিনি পেয়েছেন ২৭১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সত্য প্রিয় চাকমা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২৬৭৩ ভোট। ৫ নং উল্টাছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আহির উদ্দিন ৪৩০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় চাকমা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭৫৯ ভোট।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, নির্বাচনের দিন ও পরের দিন লোগাং, সদর ইউপিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুর, হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে। ১ নং লোগাং ইউনিয়নে ফুটবল মার্কার রুবেল নামে এক মেম্বার পদপ্রার্থীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বাসাবাড়ি ভাঙচুর ও আত্মীয়স্বজন হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন লোগাং ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান।
তিনি বলেন, আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নৌকার জন্য কাজ করেছি। ওরা আমাকে ফুটবল মার্কার জন্য মাঠে নেমে কাজ করতে বলেছিল। আমি করিনি। তাই তারা আমার ওপর চড়াও হয়ে আমার বাড়িতে সন্ধ্যায় হামলা চালায়। আমার শ্বশুর বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি ভাঙচুর করে। আমার শ্বাশুড়ি ও দাদা শ্বশুরকে মারধর করে, পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে। গ্রাম পুলিশ হান্নান, (পিতা জামাল হোসেন, আকতার (পিতা ফরিদ উদ্দিন), সফর আলী (পিতা মৃত জনাব আলী), টিপু (পিতা নজরুল ইসলাম) প্রমুখ গং আমার বাড়িতে হামলা করছে। আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
একই বিষয়ে লোগাং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের লোগাং ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী সাদ্দাম বলেন, নৌকার পক্ষে নয়, নৌকার নাম ব্যবহার করে বিএনপির মেম্বারের পক্ষে কাজ করায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা এসব করেছে। উনার (ইমরান) জন্য নৌকা আশানুরূপ ভোট পায় নাই। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি হান্নানের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে একই কথা বলেন লোগাং ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি হান্নান। তিনি বলেন, গায়ে নৌকার সাইনবোর্ড লাগিয়ে হয়ে বিএনপি করা মেম্বার প্রার্থীর পক্ষে বাসায় মিটিং, তার পক্ষে কাজ করায় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরা মঙ্গলবার সকালে সবাইকে নিয়ে আলাচনায় বসেছি। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলে দেওয়া হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।
লোগাং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মিলন কান্তি সাহা জানান, ইমরান নৌকা প্রতীকে আমার কর্মী। হামলা, ভাঙচুর, মারধরের খবর পেয়ে তা উপজেলার দলীয় হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এখানে অনেক নিরপেক্ষ কর্মীও আছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দল ভালো-মন্দ যাচাই করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।
প্রসঙ্গত, পানছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ২৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৫৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫২ হাজার।