আরমান খান, লংগদু
গ্রামের কিছু কিশোর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে নিয়মিত। এমন একটা খবর পেয়ে কয়েকজন পাখিপ্রেমী যুবক ছুটে চলেন শিকার করা পাখি উদ্ধার করতে। উদ্ধার অভিযান সফল হয়। শিকারী কিশোরদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪টি ঘুঘু পাখি। বিনিময়ে কিছু টাকা দিতে হয় শিকারী কিশোরদের। এরপর পাখিগুলোকে নীল আকাশে মুক্ত করে দেন পাখি প্রেমী যুবকরা। এভাবে গত দু’বছর ধরে লংগদুতে পাখি রক্ষায় কাজ করছেন পরিবেশবাদী কয়েকজন যুবক।
শুধু পাখিদের মুক্ত করেই তারা থেমে থাকেনি। শিকারী কিশোরদের বোঝানো হয় পাখির জন্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। এসব পাখি আমাদের পরিবেশের নানা উপকারে আসে। তাদের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। শিকারীদের সচেতন করে পাখি রক্ষায় ভূমিকা রাখা যুবকরা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। এদের কেউ স্কুল শিক্ষক, আবার কেউ সরকারি নানা দফতরে কর্মরত। শিক্ষিত ও সচেতন এই যুবকরা মনে করেন পাখিরা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এমনিতেই পাখিদের আবাসস্থল সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।
পাখি প্রেমী স্কুল শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীতের সময়ে কিছু দুষ্টু শিকারি নানা রকম ফাঁদ পেতে পাখি ধরে বাজারে বিক্রি করে। আমরা বন্ধুরা বিষয়টি জানার পর শিকারীদের কাছ থেকে পাখিগুলো উদ্ধার করে মুক্ত করে দেই। পাশাপাশি পাখি রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এতে ভালো কাজ হচ্ছে। আগে যেসব গ্রামে শিকারীরা অবাধে ফাঁদ পাততো, এখন সেসব এলাকার মানুষের প্রতিরোধে শিকারীরা আর ফাঁদ পাততে পারেনা।
পাখি প্রেমী দলের সদস্য শাহ আলম সবুজ বলেন, পাখি খুবই নিরীহ প্রাণী। দুষ্টু শিকারিরা তাদের ধরে বাজারে বিক্রি করে। আমরা চেষ্টা করছি পাখিদের রক্ষা করতে। এই পৃথিবীর আলো বাতাসে পাখিরাও বাচুঁক আপন প্রাণে। সবার সচেতনতাই পারবে পাখিদের রক্ষা করতে।
পরিবেশ রক্ষায় পাখিদের নানা ভূমিকার কথা লেখা হয়েছে গনমাধ্যমসহ নানা রকম পরিবেশ বিষয়ক জার্নালে। সেই সূত্রে জানাযায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্রুত বনায়ন বাস্তবায়নে পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রধানত পাখির মল ত্যাগের ফলে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে দ্রুত বনায়ন সম্ভব হয়ে উঠে। এদিকে পাখির বৃষ্টা ভূমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। অন্যদিকে বসতি বিস্তার, ফুল থেকে ফল উৎপাদনে পাখির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ছাড়াও পাখিরা ফলমূল, পোকা-মাকড়শা এবং কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। ফলে জমির ফসলকে কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে পাখি এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আদিযুগে মানুষ যে পরিবেশে বসবাস করতো, সেখানে প্রাণি জগতের কেউ তার মিত্র ছিলনা। সবাই শত্রু এবং তাদের কেউ কেউ অনেক ভয়ংকর ও প্রাণঘাতি ছিল। কেবল মাত্র পাখি তাদের ভয়ের কারণ ছিল না। মানুষ প্রকৃতি থেকে বড় দুটি উপহার পেয়েছে, তার একটি হলো উদ্ভিদ আর অন্যটি হলো পাখি। আমরা জানি আমাদের দেশে পাখি শিকারিদের জন্য কড়া আইন বলবৎ আছে। কিন্তু আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ নেই। দেখা যায় আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে শিকারীরা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নির্বিচারে নিধন করে থাকে। এসব শিকারি জ্যান্ত পাখিদের বন্ধী করে খাঁচায় পুরে এদের মুক্ত জীবনকে চীরদিনের মতো স্তব্দ করে দেয়।
আমাদের পরিবেশে পাখিদের নির্ভয়ে বেঁচে থাকা জরুরি। পাখি বাঁচলে পরিবেশ সুন্দর থাকবে। পাখিদের রক্ষায় লংগদুর গুলশাখালী ইউনিয়নের যুবকদের মতো প্রতিটি ইউনিয়নে, প্রতিটি গ্রামে পরিবেশ সচেতন যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। পাখির জন্য ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্তু ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে।