রাঙামাটিলিড

পর্যটকের পদভারে মুখর রাঙামাটি

শংকর হোড় ॥
পর্যটকের পদভারে এখন মুখরিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। ঈদের ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসেছেন পর্যটকরা। ঈদের ২য় দিন থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক ঢল নামতে থাকে। গত বুধবার সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি নামলেও দুপুরের পর আস্তে আস্তে প্রকৃতি স্বাভাবিক হতে থাকে। সকালে বৃষ্টিতে পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াতে না পারলেও দুপুরের পর থেকেই রাঙামাটি শহরের সব পর্যটন স্পটে বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যটকদের ঢল একই ধারা বজায় ছিল। পর্যটকদের বিষয়টি মাথায় রেখে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রগুলোও।

দুই বছর করোনায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে না পারলেও এবার চিত্র ভিন্ন। এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে হ্রদ, পাহাড় ও মেঘের মিতালি উপভোগ করতে রাঙামাটি ভ্রমন করছে পর্যটকরা। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্কসহ সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকের সরব পদচারণা। ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখর। ঈদের লম্বা ছুটিতে রাঙামাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঝুলন্ত সেতুতে ভিড় করেছে পর্যটকরা। সেখান থেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ বিহারের জন্য বোট ভাড়া করে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা। অনেকেই দল বেঁধে আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যান্ত্রিক শহরের কোলাহল ভেঙ্গে নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

এদিকে একই ভিড় দেখা গেছে পলওয়েল পার্কেও। পার্কের গেইট থেকে একেবারের শেষ পর্যন্ত পর্যটকে ভরপুর। পর্যটকরা পার্কের ভিতরে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পলওয়েল পার্কের মিনি ঝুলন্ত সেতুতেও কেউ কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হ্রদের শান্ত জল ও সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এসময়ে হ্রদের পানি কম থাকায় সৌন্দর্য একটু বিঘœ ঘটলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।

খুলনা থেকে আসা পর্যটক সুমন বর্মন বলেন, দেশের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। কিন্তু কখনো রাঙামাটি আসা হয়নি। প্রথমবার রাঙামাটি এসে এর প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে খুবই ভালো লাগছে।

কক্সবাজার থেকে ঘুরতে আসা ফারজানা আক্তার বলেন, ভেবেছিলাম আজকে এসে ঝুলন্ত সেতু দেখে চলে যাবো। কিন্তু রাঙামাটির সৌন্দর্য দেখে আরো একদিন থাকার পরিকল্পনা করছি।

পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে রাস্তাঘাটে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। পর্যটকবাহী বাস, মাইক্রোসহ যানবাহনগুলো পার্কিং করার জায়গা না পাওয়াতে সড়কের পাশেই পার্ক করে রাখা হয়েছে। এতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর আশপাশের সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট।

পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পাহাড়ঘেরা হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছোট-বড় বোট ভাড়া করে ভ্রমণে বের হচ্ছেন তারা। অনেকের কাপ্তাই হ্রদঘেঁষা স্পটে রাত্রিযাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী বলেন, ঈদে ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক এসেছে। যথাসাধ্য আমরা পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে শহরের টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতেও। পর্যটক আকর্ষণে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পাহাড়ি পোশাক, পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন দোকানদাররা।

বুনন টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী তুলি চাকমা বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ, আচার ও হাতে তৈরি পণ্য দোকানে তুলেছি। যথেষ্ট পর্যটক আসছেন এবং বিক্রিও মোটামুটি ভালো।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন কান্তি বড়ুয়া জানান, একটা ভালো সময় পার করছি। আশা করছি করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে সেখান থেকে আয়ের ধারায় ফিরতে পারবো। এখনো ৭০ ভাগ হোটেলের রুম বুকিং আছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক উৎপল চক্রবর্তী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সতর্ক আছি। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিত মোকাবেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সক্রিয় আছে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − thirteen =

Back to top button