ফুরোমন টা ডাকে প্রায়শই…পাহাড়ে চাপাও কঠিন! বাড়ি ফেরার পথে চোখ আটকালো এক উঁচু ঢিবিতে! দেখেছিতো বেশ অনেকবার। শহরের মূল রাস্তাটা যে এ পথে ধরেই ছুটে যায়। সিড়িগুলো উঠে গেছে ওই উঁচুতে।খুব বেশি উপরে কি! নেমেই দেখা যাক।সিড়ির গোড়াতেই গত ১৩জুনের ক্ষত স্পষ্ট! কোনমতে জোড়া তালি দিয়ে আটকে রেখেছে সিড়িগুলো। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ফোটা। উঠতে শুরু করলাম। খুব বেশি না আর ইট সিমেন্টের সিড়ি হওয়াতে খুব একটা কষ্টও হয়না। সিঁড়িতে চাপতে চাপতেই বশ করছে মুগ্ধতা! এই শহরটা আমার। উঠেই সবুজের এক বিশাল গালিচা! যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে স্ব-মহিমায়! মাঝারি সাইজের একটা মাঠের মত।পুরোটা জড়ানো সবুজে পায়ের কাছে চোখের সীমায়।সব সবটা সবুজের সমারোহ! আর নিচে তাকালে একপাশে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়া(খাল) অন্যপাশে শহর রাঙামাটির সদর দরজা। আর দূ-রে লেকের জলে আকাশের ছায়া আর পাড় জুড়ে নাগরিক সভ্যতা। আর এখানে হাতের কাছেই মেঘ। ফুরোমনের চূড়া। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির বদৌলতেই কানামাছি হয়ে ছুটছে মেঘের দল। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে কিন্তু যাবেনা। লোভ সংবরণ করা গেলে বেঁচে যাবেন,ফুরোমন কে এত কাছে থেকে দেখে অথবা আফসোস বাড়বে ফুরোমনকে আলিঙ্গন করার।মেঘ কেটে রোদ বাড়লো হঠাৎ। চকচক করছে একপাশে ফুরোমন আর অন্য পাশে শহরটা। চোখে মেললেই একটু দূরেই ঘাগড়া বাজার। পাহাড়ের কোলজুড়ে উচুতে নিচুতে উঁকিঝুকি দিচ্ছে ঘরবাড়ি। সদ্য প্রলয় কাটিয়ে জেগে উঠছে এই জনপদ আবার।
অবাক হচ্ছিলাম এই ভেবে এই পথেই ছুটেছি কত কতবার। কখনো ভাবিইনি এই ছোট্ট ঢিবিতেই লুকিয়ে আছে অপার মুগ্ধতা।
মূলত বুদ্ধ প্রতিমূর্তি বানানোর জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে এই স্থান।বানানো হয়ে গেলে দর্শনার্থী বাড়বে তবে পাওয়া যাবেনা এই স্বচ্ছ নিজেস্ব কিছু সময়।কেবল ফুরোমনে ডুবে থাকা।
এই শহরের প্রতি পথের বাকজুড়েই অপার মুগ্ধতা। ফিরতি পথে কলকল শব্দে থামালাম গাড়ি।একদম পথের কোল ঘেষে বেয়ে নামছে ঝিরি!লোভ সামলানো দায়।নেমে পড়লাম।ঠান্ডা শুদ্ধ জলের ছোয়ায় শৈশব দুরন্তপনা ভাসে।পথের এপার হয়ে অপারে গিয়ে বয়ে যাচ্ছে অই অদূরে।কি স্বচ্ছ জল।
ফিরতি পথে বোনাস। বর্ষায় যৌবনা পাহাড় চিড়েই জায়গা জায়গায় দেখা মিলবে এমন ছোট বড় মৌসুমি ঝিরি ঝর্না।পানি শতভাগ শুদ্ধ আর আর শীতল।আর পথে পথে হঠাৎ কাশের ঝোপ।আমার ভালোবাসার এই শহরটা জুড়ে মুগ্ধতা ভালোবাসা কেবল বেড়েই যায়…..
ঘাগড়া বাজার পেরুলেই নতুন নির্মিত ব্রিজের একটু সামনে এগুলেই বড় সাইনবোর্ডে লেখা আছে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান।আর শহরের দিক থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্তম্ভ পার হয়ে এগোন আরো ৫টা মিনিট। একদিন হুট করেই চলে যান। মেঘ রোদের টাইমিং ঠিকঠাক না মিললেও দেখে নিতে পারবেন শহরটা।আর আরো বেশি বিমোহিত হতে হলে যেতে হবে সুর্যাস্ত কিনবা সূর্যোদয়ের সময়।অথবা মেঘ ঝরা সময়ে।
শহরের যেকোন স্থান থেকে নিয়ে নিন রিজার্ভ সিএনজি।অথবা লোকাল সিএনজিতে যেয়ে নেমে গেলেন।বন্ধুরা মিলে শহর থেকে দূরে চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে একটু হেটে ঘাগরা বাজারে গিয়ে চা নাস্তা খেয়ে ওখান থেকেই সিএনজি পেয়ে যাবেন শহরে ফেরার।
আর হ্যাঁ পাহাড়ের নিচের অংশে নামার চেষ্টা করবেন না,না জেনেশুনেই আর সাবধান তথাকথিত রক্ষাকর্তাদের থেকে।আর হ্যাঁ নিজ শহর কে পবিত্র রাখার দায়িত্বও আপনার নিজের।অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখুন নিজেকে।
ভালোবাসুন নিজের শহরকে।
তানিয়া এ্যানি
১৮.০৯.২০১৭