খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতায় এক ভিখারিনীর ঘর ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা উপজেলার কবাখালি ইউনিয়নের উত্তর মিলনপুর গ্রামে। এর আগে উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে কাঠালবাগান এলাকায় এক পরিবারের ৬জনকে মারধোর করে আহত করে তাদের বাড়ি ভাংচুর করা হয়। আহতরা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা কিছুদিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী। হামলার শিকার ব্যাক্তিরাও আওয়ামীলীগে যোগদানকারী। মূলত এ বিরোধ সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নয়। গত ইউপি নির্বাচনের বিরোধের জের ধরে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। যার কারণে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ এসব ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতে রয়েছে।
মিলনপুর এলাকায় ভাংচুর করা হয় খোকনের ঘরের আসবাবপত্র ও তার শ্বাশুরী ভিখারীনি জয়মালা বেগমের (৫৫) ঘর। খোকন (৩০) জানায়, বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় শফি মেম্বারের ভাগিনা সোহাগ (২৫) এবং ফারুকের (২৭) নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের দল তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় ঘটনা আঁচ করতে পেরে খোকন পালিয়ে যায়। পরদিন (শুক্রবার) সকালে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। খোকন আরো জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে তিনি হাতেম মেম্বারের পক্ষ্যে নির্বাচন করেছিলেন এবং হাতেম মেম্বার বিজয়ী হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় পরাজিত শফি মেম্বার। সে কারণেই তাদের উপর এতো নির্যাতন।
খোকনের স্ত্রী ইয়াসমিন (২৫) জানান, তার স্বামিকে না পেয়ে হামলাকারী ফারুক তার গলাটিপে ধরে এবং সোহাগ ছুরি দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অন্যান্যরা তাদের ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে খোকনকে খোঁজতে থাকে। এ ঘটনার সময় খোকনের শ্বাশুরী দ্রুত সেনাজোনে গিয়ে খবর দেয়। ততক্ষনে ভাংচুর করা হয় খোকনের শ্বাশুরীর ঘর এবং ঘরে থাকা হাড়ি-পাতিল। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি পৌছার শব্দ শুনে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
খোকনের শ্বাশুরী জয়মালা বেগম (৫৫) কান্না করে কালের কন্ঠ’কে বলেন, ‘সড়কে মাটির কাজ করার সময় হাত ভেঙ্গেছে আমার। এর পর থেকে ভিক্ষা করে খাই। পুরাতন টিন দিয়ে থাকার মতো ছোট্ট একটি ঘর বেঁধেছিলাম; সেটিতে কুপিয়েছে, ভাংচুর করেছে আমার হাড়ি-পাতিল’ জয়মালা আরো জানান, এনজিও থেকে কিস্তিতে তোলা ২০ হাজার টাকা ঘরে ছিল, যা হামলাকারীরা নিয়ে গেছে।
খোকনের মা সেলিনা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘সংসদ নির্বচনের পরে সবুজ বাংলা ক্লাবে গিয়ে ছেলের বয়সী সকল ছেলেদের পায়ে ধরে মাফ চেয়ে বলেছিলাম আমার ছেলেকে মাফ করে দেওয়ার জন্য, এর একদিন পর এমন ঘটনা ঘটাল। ভাগ্য ভাল সাথে সাথে আর্মি না আসলে বড় ধরনের অঘটন ঘটাতো তারা।’
কবাখালি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালের কন্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি থেকে যোগদানকারীরা নিজেদের ব্যাক্তি আক্রোষ মিটাতে দলের উপর ভর করে এসব তান্ডব চালাচ্ছে, এর দায় আওয়ামীলীগ নিবেনা।’ আজাদ আরো জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশনা রয়েছে কোথাও কোন বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার জন্য। তবে আজাদ স্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজি মো. কাশেমের নির্দেশে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি ভিখারীনির ঘর ভাংচুরের ঘটনা; এবং তা আমি তাৎক্ষানিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিকে অবহিত করেছি। এর পর পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।
দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ উত্তম চন্দ্র দেব জানান, রাতের ঘটনা তাৎক্ষনিক কেউ অবহিত করেনি। বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এর আগে সোমবার গভীর রাতে মেরুং এলাকার কাঠাল বাগান গ্রামে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে মারধোর করে আহত করা হয় একই পরিবারের ৬জনকে। যারা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতরা হলেন, মুজিবুর রহমান (৪৫), তার স্ত্রী মল্লিকা বেগম (৩৮), মেয়ে মর্জিনা আক্তার (২০), রীনা আক্তার (১৫), সামিরা আক্তার (১৪) এবং ছেলে জাহেদ (১৮)।