নায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না থানচির জুম চাষীরা

থানচি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় জুম চাষের মৌসুমে ধান লাগানো এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। এরইমধ্যে সার নিয়ে লঙ্কাকান্ড শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে কোন প্রকার সারের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সরকারি দামের তোয়াক্কা না করে সারের সংকট দেখিয়ে ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছেন। মৌসুম শুরু না হতে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি আদায় করছেন তারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে সারের দাম বেড়েই চলেছে। ন্যায্য দামে সার পাচ্ছেন না কৃষক। কৃষি অফিসের সঠিক তদারকি ব্যবস্থা থাকলে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসারগণ উপস্থিত না থাকায় এমনি ঘটছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, প্রতি কেজি ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ২২ টাকা, ইউরিয়া ১৬ টাকা ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১৫ টাকা কেজি দর নির্ধারণ করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে টিএসপি ২৫-৩০ টাকা, ইউরিয়া ১৮-২২ টাকা, পটাশ ১৮- ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সারের দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো থাকার কথা থাকলেও কোনো ডিলার এই নিয়ম মানছেন না। সার বিক্রির পর রশিদ দেওয়া নির্দেশনার নেই বাস্তবায়ন। উপজেলা ৪নং বলিপাড়া ইউনিয়ন সরকারি সার বিপণনে লাইসেন্স প্রাপ্ত ডিলার জাফর আহমেদ, ৩নং থানচি সদর ইউনিয়নে মহিউদ্দিন, ২ তিন্দু ইউনিয়নে মো. ওসমান ও ১নং রেমাক্রি ইউনিয়নে মুইশৈথুই মারমা।
বলিপাড়া ইউনিয়নে বাজারের মধ্যখানে সার ডিলার জাফর আহম্মদের দোকান। সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় দোকানের ম্যানেজারের মো. আরমানের সাথে। সাংবাদিক দেখে তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ ২ ঘন্টা ওই দোকানে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অসংখ্য কৃষকের ভিড় থাকা সত্ত্বেও তিনি কারো কাছে এক কেজি সার বিক্রি করতে রাজি হননি। কৃষকদের কাছ থেকে সারের প্রকৃত দাম জানতে চাইলে ম্যানেজার আরমান ক্রেতাদের কখনো বা ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন সার কিনতে আসা নিরহ জুমিয়াদের। এই সময় ডিলার জাফর আহম্মদের কাছে মুঠোফোনে বেশিদামে সার বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার সাথে সামনাসামনি দেখা করে বক্তব্য দিবো।
থানচি সদর ইউনিয়নের সার ডিলার মহিউদ্দিনকেও দোকানে পাওয়া যায়নি। কথা হয় দোকান কর্মচারী ফারুকের সাথে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে ২ টাকা বেশি দামে সার বিক্রির কথা অকপটে স্বীকার করে নেন। এই বিষয়ে মহিউদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি তো এখন বান্দরবানে আছি, ফারুকের সাথে কথা বলেন সম্পূর্ণ তথ্য দিবে।
তিন্দু ইউনিয়নে সার ডিলার মো. ওসমান মুঠোফোনে বলেন, আমি বান্দরবানে থাকি ভাই, আমি তিন্দু যায়ও না আর সার উত্তোলন ও বিপণনের বিষয়ে আমার সাব ডিলার বড় মদকের শৈক্যচিং মারমা বিস্তারিত জানেন। আপনার কাছে সাব ডিলার নিয়োগের অধিকার আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভাই সব বিষয়ে আপনি শৈক্যচিং মারমা এর সাথে কথা বলেন, সে বিস্তারিত ভালো বলতে পারবে। সাব ডিলারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রেমাক্রি ইউনিয়নে সার ডিলার মুশৈথুই মারমা’র সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রেমাক্রি ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চাষাবাদের জন্য সারের প্রয়োজন। এখানে সার না পেয়ে আমাদেরকে সরাসরি থানচি গিয়ে সার, কীটনাশক এসব নিয়ে আসতে হয়। উপজেলা জুড়ে ন্যায্য মূল্যে সার কিনতে না পারায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ। বলিপাড়ার একজন কৃষক রেম পও ¤্রাে জানান, সারের বাড়তি দামের কারণে তার এইবছর আর চাষাবাদ করতেই ইচ্ছা করছে না।
এই বিষয়ে থানচি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি হচ্ছে না কথাটি সঠিক নয়। দোকানে মূল্য তালিকা না টাঙানো ও কৃষকদের রশিদ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত ১০-১৫ আগে সকল ডিলারকে মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেই সাথে আগামীতে তারা কৃষকদের যাতে সার কেনার পর রশিদ দেন এই বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ডিলার কোনো অবস্থায় সাব-ডিলার নিয়োগ করতে পারেন না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আরিফিন সবুজ বলেন, সার কিনতে কৃষকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে এই বিষয়ে আমার জানা নেই, বাজার মনিটরিং করার জন্য চারজন জন্য ট্যাগ অফিসার আছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী কোথাও সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে না।