দৃশ্যমান কাজে আগ্রহী নয় রাঙামাটি জেলা পরিষদ!

পুরো পৃথিবীতে এখন আতঙ্কের নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)। এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। চীনের মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে নতুন করে রেকর্ড গড়ল ইউরোপের দেশ ইতালি। সম্প্রতি এই ভাইরাসটির আক্রমণে বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন চারজন; আক্রান্ত রয়েছেন আরও ৩৯ জন। বাংলাদেশে করোনার মহামারী ঠেকাতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ। তবে করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের চোখে দৃৃশ্যমান এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন প্রভাবশালী সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ! নাগরিকগণ বলছেন, দেশের এই সংকটকালীন সময়ে জেলা পরিষদের কোনো কাজই দৃশ্যমান হয়নি জনসাধারণের চোখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিভাগ জেলা পরিষদের হাতেই ন্যস্ত। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জেলা পরিষদগুলোর ভূমিকা জরুরি। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমের বিগত সময়েও এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। জেলা পরিষদের এমন কর্মকাÐে ক্ষুব্ধ জেলাবাসী।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সনজীব বড়–য়া বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের এই সময়ে নীরব ভ‚মিকা আমাদেরকে হতাশ করেছে। যারাই এ ক্লান্তিকালে সব চেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখার কথা তারাই আজ নীরব। জেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর চাইলে যে সকল কাজ সামাজিক সংগঠনগুলো করছে তারা সেসব কাজও অন্তত করতে পারতো। দরিদ্র ও হতদরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারতো, কিন্তু তারা তাও পারেনি।
তরুণ সমাজকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস মনি বলেন, ‘এ রকম একটি মহামারিতে জনগণ এবং সামাজিক সংগঠনের আগে জেলা পরিষদের মত দপ্তরগুলো আগে মাঠে নামা উচিত ছিল। তাদের এ হাত-পা গুটিয়ে রেখে বসে থাকাটা দেখে মনে হচ্ছে ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ এ রকম মন ভাবের।’
ক্রীড়াবিদ ও স্যোশাল এক্টিভিস্ট নাছির উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘জেলা পরিষদের কাছে যখন স্বাস্থ্য বিভাগ হস্তান্তরিত সে প্রেক্ষিতে তাদের অনেক কাজ করার উচিত ছিলো। এটা খুবই দুঃখজনক যে, পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যারা এগিয়ে আসবে সেখানে তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এটা সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন এবং অনেক জিজ্ঞাসা তৈরি করেছে। এ জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যেখানে এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে সেখানে সরকার কর্তৃক পার্বত্য এলাকার জন্য বিশেষ ভাবে গঠন করা দপ্তরগুলোর কর্মকাÐ হতাশাব্যঞ্জক।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও পরিষদের স্বাস্থ্য বিভাগ উপ-কমিটির আহŸায়ক হাজী মুছা মাতব্বর এ বলেন, ‘আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রতিটি উপজেলায় চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় পিপিই ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে এবং পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, ‘আমরা কী পৌরসভার মতো এলাকায় এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে ছিটাবো নাকি। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে যা কিছু করা দরকার এবং মনিটরিং করা দরকার তা করছি।’
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সিভিল সার্জনের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখেছি। তার কী কী লাগবে আমাকে জানাতে বলেছি এবং আমি যা লাগে তারই ব্যবস্থা করে দিবো বলে জানিয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি আমাকে কিছু চাহিদার কথা জানিয়েছেন, আমি তাকে বলেছি সেগুলো আনার ব্যবস্থা করার জন্য আমি অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, যা লাগবে তাই আমরা আনব এবং প্রয়োজনে সব কিছু করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের করোনা সংক্রান্ত সভাগুলোতে থাকতে বলেনি। যদি বলতো অবশ্যই আমরা প্রতিনিধি পাঠাতাম। আমরা সব সময় রাঙামাটিবাসীর পাশে আছি। জনসাধারণকে বলব, ভয় পাবেন না, সরকারের নিদের্শনা মেনে চলুন। আমরা আপনাদের সেবার জন্য প্রস্তুত।’