
করোনা ভাইরাসের আতংকে পুরো বিশ্ব। এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা ও দাফন করতে হবে। সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রিজার্ভ বাজার এলাকার দুইজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পরে তাদের নমুনা পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ এসেছে। তবে এদের দুজনেরই জানাজা’র ক্ষেত্রে মানা হয়নি নিয়ম ! এমনকি সরকারি নির্দেশনায় নয়,জানাজার পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হয়েছে পরিবার দুটির ইচ্ছেতেই। অথচ এর আগে করোনা উপসর্গ নিয়ে জেলায় মারা যাওয়া সকলের ক্ষেত্রেই কঠোরভাবেই অনুসরণ করা হয়েছিলো নিয়ম। তবে রিজার্ভবাজারেই কেনো এই ব্যত্যয়? কেনোইবা দুটি মৃত্যুর কারণে ঝুঁকিতে পড়ে গেলো পুরো রিজার্ভবাজার ! এনিয়ে চলছে শহর জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ বলছেন,ধর্নাঢ্য পৌর কাউন্সিলর এবং ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার সুবিধাই কি নিলেন তারা দুজন ! নাকি শুধুই দুটি পরিবারের ‘ভুল’ আর ‘অসচেতনতা’য় ঝুঁকিতে পড়লো পুরো এলাকার কয়েক হাজার মানুষ !
করোনা উপসর্গ নিয়ে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার এলাকার ১নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন এর মা মাসুদা খাতুন গত ১৬ জুন (মঙ্গলবার) মারা যান, তার ঠিক একদিন পরে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার মারা যান একই এলাকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরীর পিতা মোহাম্মদ সাবের হোসেন চৌধুরী। মৃত্যুর পরে তাদের নমূনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম পাঠানো হলে ২১ জুন (রবিবার) রাতে তাদের দুইজনের রিপোর্টই পজিটিভ আসে।
এই দুইজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদে। জানাজায় স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়নি বলে শহর জুড়ে চলছে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। অধিক মানুষের উপস্থিতি সহ নিরাপদ দূরত্ব ছিলো না বলে দাবি অনেকের।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, আমার বাবার শ্বাসকষ্ট ছিলো, তাকে সে জন্য হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে তিনি মারা যান। আসলে তার করোনা ছিলো এটি যদিও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও রিপোর্টে যখন এসেছে কি আর করার। আমরা তার জানাজা রিজার্ভ বাজার মসজিদে করিয়েছি। তবে আমরা তখন তো জানতাম না, তার রিপোর্ট এমন আসবে। তবুও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা মৃত্যুর সংবাদ মাইকিং করে বলিনি। শুধুমাত্র জুমার নামাজে যারা মসজিদে ছিলো তারাই জানাজায় অংশগ্রহন করেছে। তবে সকলে জুমার নামাজের নিয়মের মতই তিন ফুট দূরত্ব রেখেই জানাজায় অংশ নেয়।
১নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার মায়ের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো তাই হাসপাতালে ভর্তি করে পরে দেড় ঘন্টার মধ্যেই তো তিনি অক্সিজেন নিতে না পারায় মারা গেছেন। আমরা তো এটাকে সেভাবে দেখি নাই। তবে আমার মায়ের জানাজা রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদে হয়েছে। সেখানে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে গেছে এবং সেখান থেকে গাড়িতে করে কবরস্থানে নেওয়া হয়েছে। এখানে বাহিরের কেউ ছিলো না। জানাজায় মসজিদে যোহরের নামাজের জন্য যারা ছিলো তারাই জানাজায় অংশগ্রহন করেন। আর দাফন স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয়েছে সেখানে পরিবারের লোকজন ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের লোক ছিলো শুধু মাত্র।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ফোকাল বিষয়ক পার্সন ডা: মোস্তফা কামাল বলেন, কোন ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জানাজা ও দাফন করতে হবে। নয়তো এতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ( এনডিসি) উত্তম কুমার দাশ জানান,আমরা তাদেরকে নিষেধ করেছি মাইকিং না করতে এবং জমায়েত বেশি না হতে। আত্মীয়-স্বজনও না আসতে বলা হয়েছিলো। তবে তাদের আত্মীয়-স্বজন নাকি বেশি, তাই উপস্থিতি বেশি হয়ে গিয়েছিলো। প্রথমে জমায়েত কম থাকলেও পরে উৎসাহী কিছু মানুষ পিছনে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় পরে আর কিছু বলা যায়নি। তবে সামনে এ বিষয়ে আমরা আরো বেশি কঠোর নজরদারি করব।’ রিপোর্ট আসার পর সোমবারই কাউন্সিলর হেলাল ও ছাত্রলীগ নেতা মিজানের বাসা লকডাউন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এই বিষয়ে রিজার্ভবাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি আনোয়ার মিয়া ভানু বলেন, প্রশাসনকেই কঠোর হতে হবে এবং সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের পক্ষে তো অনেক কিছু করার থাকেনা। প্রশাসনকেই এইসব বাস্তবায়ন করতে হবে, কারণ সামাজিক কারণে আমাদের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব নয়।’