মিশু মল্লিক ॥
রাঙামাটি সদর উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক জয় ত্রিপুরা হত্যার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যাকরীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জয় ত্রিপুরার ভাই সাগর ত্রিপুরার দায়ের করা হত্যা মামলারও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। তবে পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলছে। গত ১৬ মার্চ রাঙামাটি হাসপাতালে অসুস্থ এক আওয়ামীলীগ নেতাকে দেখতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ নেতা জয় ত্রিপুরা।
হত্যাকারী গ্রেফতার না হওয়া প্রসঙ্গে জয় ত্রিপুরার মামা ঝিনুক ত্রিপুরা বলেন, জয় হত্যার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তার খুনিরা ধরে পড়েনি, এতে আমরা প্রচন্ড হতাশ। আমরা মামলা করেছি, কিন্তু পুলিশকে নিয়মিত তাগাদা দিলেও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। উনারা বলছেন উনারা খুনিদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছেন, উনাদের আরো সময় প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি, পুলিশ এবং প্রশাসন প্রথম দিকে যেভাবে তৎপর হয়েছিল সেই তৎপরতা এখনো বিদ্যমান থাকলে খুনিরা এতদিনে ধরা পড়ে যাওয়ার কথা।
এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, আমি মনে করি জয়ের হত্যাকরীদের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তাই আপাতত জয় হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমরা কোন ধরনের আন্দোলনে যেতে চাই না। কারণ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের স্বার্থে হয়তো উনারা একটু সময় নিচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা নিয়মিত প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখছি।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের সভাপতি ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেছেন। জয়ের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য যেসব জায়গায় জানানো প্রয়োজন তার সবই তিনি করছেন বলে মন্তব্য করেন প্রকাশ চাকমা।
উল্লেখ্য যে, জয় ত্রিপুরা হত্যার একদিন পর গত ১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হতে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টা আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিলো।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই বিষয়ে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। এখনো এটার কাজ চলছে। আমরা কিছু ক্লু এবং ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, ওগুলো নিয়ে আমাদের কাজ চলমান আছে। কোন আসামি গ্রেফতার হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে বাইরে আছি। আপনি ওসির সাথে কথা বলেন।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, আমরা কিছু কিছু সূত্র পেয়েছি এবং সেই সূত্রের ভিত্তিতে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছি। আটককৃত ব্যক্তি এখনো কোনও স্বীকারোক্তি প্রদান করেনি। তবে আটককৃতের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আরো কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, যেহেতু এটি একটি “ক্লু-লেস মার্ডার” তাই কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না, তবে খুনিদের গ্রেফতারে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এদিকে এই হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ যাকে আটক করা হয়েছে সেই শিবাশীষ আইচ বিটুর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিটুকে ফাঁসানো হয়েছে। এই বিষয়ে বিটুর বাবা বলেন, যেই দিন ঘটনা ঘটেছে সেইদিন আমার ছেলে রাঙামাটি শহরে ছিলোই না। পুলিশ তাঁর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সেই বিষয়টি নিশ্চিতও হয়েছে। তারপরও তারা তাকে দুইবার রিমান্ডে নিয়ে গিয়েছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে হত্যার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আমরা সত্য মিথ্যা বিচারের ভার আইনের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জমির উদ্দিন হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য অনেক নেতাকর্মীদের মত জয়ও তাকে দেখতে হাসপাতালে যান। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে হাসপাতাল গেইটে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার মোটরসাইকেল আটকে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে জয়কে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি মারা যান।