
কোনো ধরণের ‘তালবাহানা’ কিংবা ‘কালক্ষেপণ’ না করে অতিশীঘ্রই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।
জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছে, কিন্তু এই চুক্তি বাতিল করা হয়নি বরং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সরকার চুক্তি করে এক পাশে রেখে দিয়েছে। অথচ দেশে এবং দেশের বাহিরে বলা হচ্ছে, আমরা (সরকার) পাহাড়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি, পাহাড়কে শান্ত করেছি। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে সব ‘বস্তার’ ভেতর হজম হয়ে যাচ্ছে। এভাবে লুকোচুরি না করে বরঞ্চ বিষয়টাকে আরও পুনর্বিবেচনা করুন। এখানে ধামাচাপা দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।’
বুধবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) রাঙামাটি জেলা কমিটি আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৩তম বর্ষপূতি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার এসব কথা বলেন।
ঊষাতন বলেন, ‘এখনো সময় আছে, আপনারা নতুন ভেবে দেখুন। পরিস্থিতিকে প্রবাহিত করা ঠিক হবে না। এটা ভাববেন না এরা পাহাড়ের অল্প কিছু মানুষ; এদের তোয়াক্কা করার কি আছে? কিন্তু এরাও বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হোক এরাও চায়। আপনারা তালবাহানা না করে, কালক্ষেপণ না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করুন। পাহাড়ের অল্পতে তুষ্ট মানুষ যারা, তারা আজ কেন অসহায়, তারা কেন আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগে? তাই আপনারা অতিশীঘ্রই ঐতিহাসিক এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’
রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সদস্য সৌখিন চাকমার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ¤্রানু মারমা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চুক্তি সম্পাদিত হয় । চুক্তির পরবর্তী এই দুই দশকে পাহাড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন এক জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙে চার আঞ্চলিক দল হয়েছে। দুই দশকে পাহাড়ের রাজনীতির পথ পরিক্রমায় হয়েছে নানান মেরুকরণ।
একদিকে এখনো চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের দাবি করছে চুক্তির পক্ষের পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, সরকার চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করবেই। তাই চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে মূল বাঁধা কোথায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।