সুহৃদ সুপান্থ
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এমন অভিযোগে আগেই দল থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন রাঙামাটির লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের দুই প্রভাবশালী নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি বারেক সরকার ও সহসভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিম।
দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া এই দুই নেতা আশা করেছিলেন নির্বাচনের পর তাদের অব্যাহতি তুলে নেয়া হবে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ভোটের আগেই সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তারা দুজনই। নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও। বারেক সরকারের পুত্র এরশাদ সরকার এবং রহিমের ভাতিজা রকিব হোসেন সরে যাওয়ায় গুলশাখালীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হলেও মাইনীমুখে আরেক বিদ্রোহী কামাল হোসেন কমল জিতে যান। রহিম নির্বাচনের পর ভাতিজা রকিব হোসেনের ফেসবুকে করা মন্তব্যের জেরে তার সাথেও সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
তবে এতসব করেও খুব একটা সুবিধা হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা এই দুই নেতার। রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই দুই নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য সুপারিশ সম্বলিত পত্র কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ। ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ এই আট নেতার বিরুদ্ধে-‘বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া,দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া,আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য’ করে গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ৪৭,প্রাতিষ্ঠানিক শৃংখলা(১১)ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করে ‘সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য’ অনুরোধ করেছে।
বিষয়টি স্বীকারও করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। তিনি বলছেন, ‘তারা দুইজনসহ বিদ্রোহীদের আটজনকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য আমরা কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছি। বাকিটা কেন্দ্র কি করে সেটার উপর নির্ভর করছে। এটা সবার জন্যই একটা শিক্ষা। দল করলে অবশ্যই দলের শৃংখলা মানতেই হবে।’
এদিকে গত দুই দশক ধরেই রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলার রাজনীতিতে নিজেদের ‘ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ’ করে তোলা এই দুই নেতার আকস্মিক এই পরিণতিতে বিস্মিত লংগদুবাসিও। বরাবরই,সববিষয়ে,সবসময় বড় বেশি ‘আত্মবিশ্বাসী’ দুই শীর্ষ নেতা যেনো জীবনের উল্টোপীঠ দেখছেন। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বারেক সরকারের যে ‘হম্বিতম্বি’ ও ‘ভাবসাব’ এর কারণে বারবার বিব্রত হচ্ছিলো লংগদুবাসিও,তারাও হতবাক ‘বাঘের কাদায় পা আটকে গিয়ে’ হাঁসফাঁসের এই দৃশ্যে।
তবে জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় রাজনীতির নানান প্রেক্ষিত বিবেচনায় হয়ত শেষাবধি দল থেকে স্থায়ীভাবে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার নাও হতে পারেন এই দুই শীর্ষ নেতা। হয়ত তাদের শেষবারের মতো সুযোগ দেয়া হতেও পারে। তবে যেটাই করা হোক,এদের যদি বোধোদয় না হয়,তাতে দলেরই ক্ষতি। তবে কারো কারো মত ‘কঠোর ব্যবস্থাই নেয়া হোক।’
কিন্তু লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য ভিন্ন। তারা বলছেন,বারেক সরকার যদি এবার ক্ষমা পান,তবে তিনি আরো অপ্রতিরোধ্য হবেন এবং কোন ভিন্নমতকে টিকতে দিবেন না। বিশেষত যারা তার বিতর্কিত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন,তাদের উপর সওয়ার হতে পারেন তিনি।
লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলছেন, যে বা যারা বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের-নির্দেশনার বিরোধীতা করেছে,তাদের আওয়ামীলীগে থাকার কোন অধিকারই নাই। তাদের বিরুদ্ধে জেলা আওযামীলীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগও বলবৎ রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।’
তবে ঘটনা যাই হোক না কেনো,রূঢ় কঠিন বাস্তবতা হলো, যে বারেক সরকারের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবে কাঁপত লংগদু,সেখানে তিনি এখন অনেকটাই নির্জিব, চেনা রাজনীতির ‘অচেনা পরিবেশ’ তাকে নতুন এক বাস্তবতার মুখেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে দীপংকর তালুকদারের বেশ ঘনিষ্ঠ ও আস্থার মানুষ হিসেবে পরিচিত আব্দুর রহিমও আছেন বেকায়দায়। দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ায়,জেলা পরিষদেও কোনঠাসা তিনি। এখন ক্ষণ গুণছেন দলের অনুকম্পা পাওয়ার। যদিও কেউই জানেননা,শেষাবধি কি হবে ! হয়ত জেলার সবচে বৈচিত্রপূর্ণ রাজনীতির উপজেলাটিতে ‘বারেক-রহিম’ অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে, নতুবা শেষতম বারের মতো ক্ষমা মিলতেও পারে দুই হেভিওয়েট’র। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা…