জেলা প্রশাসককে রাঙামাটি ছাত্রদলের ১৩ দফা প্রস্তাবনা

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ মোকাবেলায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, রাঙামাটি জেলা শাখার পক্ষ হতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কাছে ১৩ টি জরুরি প্রস্তাবনা জানানো হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের পক্ষে জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির,সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন সাকু প্রস্তাবনার লিখিত একটি কপি জেলা প্রশাসনকে তুলে দেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর(এনডিসি) উত্তম কুমার দাশ প্রস্তাবনার কপিটি গ্রহণ করেন।
ছাত্রদলের দেয়া প্রস্তাবনার শুরু ১৯ মহামারী প্রতিরোধে প্রশাসন এর সহায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করার কথা জানিয়ে ছাত্রদলে নেতা বলেন, ‘ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে পূর্ণ সচেতন থেকে শুরু থেকেই বিভিন্ন এলাকায়,মসজিদে,মন্দির, গণপরিবহন সহ বাজার এলাকায় জনসাধারণ কে সচেতন করা, জীবাণুনাশক স্প্রে-করণ কর্মসূচি পালন, ঘরের মধ্যে অব¯’ান করা, দল মত নির্বিশেষে বাসায় বাসায় ত্রাণ সাহায্য প্রেরণ সহ অনান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।’
এতে আরো বলা হয়,‘রাঙামাটি জেলাকে করোনা মুক্ত রাখার জন্য আপনার সকল প্রশংসনীয় প্রচেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করে এই বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিকে করোনা মুক্ত জেলা হিসেবে রাখার প্রচেষ্টা স্বরুপ জেলা প্রশাসন কে সহযোগিতা পূর্বক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাঙামাটি জেলা শাখার পক্ষ হতে জনসাধারণ এর মতামত এর প্রেক্ষিতে নি¤েœাক্ত কিছু জরুরি প্রস্তাবনা সমূহ পেশ করা করছি।’
প্রস্তাবনা সমূহঃ
প্রস্তাবনা ০১
রাঙামাটি ফিসারী কর্তৃক মাছের গাড়ি অবাধে চলাচল অনতিবিলম্বে বন্ধ করা।
দাবির পক্ষে যুক্তিঃ- রাঙামাটি ফিসারী হতে মাছ বোঝাই গাড়ি যা প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম, ঢাকাতে আসা যাওয়া করছে এবং করোনা আক্রান্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জ জেলাতেও এর অবাধ চলাচল রয়েছে। এছাড়াও যাত্রী বোঝাই এর ব্যাপারেও আমরা তথ্য নিশ্চিত করেছি। আপনি অবগত আছেন ইতিমধ্যে একজন ট্রাক চালক হবিগন্জ জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যার বাড়ি রাঙামাটির লংগদু উপজেলায়। যদি দ্রুত এই বিষয়ে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না যায় রাঙামাটিকে করোনা মুক্ত জেলা হিসেবে বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে উঠবে।
বিকল্প প্রস্তাবঃ-বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে যদি এই মাছ বোঝাই গাড়ি চলাচল বন্ধ করা সম্ভবপর হয়ে না উঠে সেক্ষেত্রে রাঙামাটি সদর সীমানার বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ির লোড-আনলোড প্রক্রিয়া প্রশাসন এর উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হোক। যেমনটা পাহাড় ধ্বস-২০১৭ এর সময় কার্যকর করা হয়েছিলো।
প্রস্তাবনা ০২
রাঙামাটি জেলা হতে যে সকল আনারস বোঝাই করা ট্রাক সরাসরি নারায়ণগঞ্জ সাথে সম্পর্কিত তাদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে সীমিত আকারে চলাচল এর অনুমতি প্রদান করা।
প্রস্তাবনা ০৩
শহরের প্রবেশমুখে শহরের বাইরে থেকে আগত প্রত্যেক গাড়িতে জীবানুনাশক স্প্রে নিশ্চিত করা, অটোমেটিক জ্বর মাপার যন্ত্র (ঞযবৎসধষ ঝপধহহবৎ) দিয়ে জ্বর পরিমাপ করা,সন্দেহজনক কেউ থাকলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা, তথ্য সংরক্ষণ করে পুনরায় শহরেই ফেরত যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবনা ০৪
যে সমস্ত জরুরি পরিবহন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসছে তাদের চলাচল সীমিত করে সপ্তাহে ২ বার একসাথে জেলা শহরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া।
প্রস্তাবনা ০৫
যদি বিবিধ কারণে ট্রাক সহ অনান্য বিশেষ পরিবহন সেবা চালু রাখতেই হয় সেক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থে রাঙামাটি সদর সীমানার বাইরে উক্ত ব্যক্তিগণকে কোন বিদ্যালয়ে/আবাসস্থলে থাকার জন্য নির্দেশ প্রেরণ করা ।
দাবির স্বপক্ষে যুক্তিঃ যেহেতু চালক/হেলপার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের মধ্যে আছেন সেহেতু সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবেই বলা যেতে পারে কেউ আক্রান্ত হলেও তা শহরের উপর প্রভাব ফেলবে না। শহর ঝুঁকিমুক্ত থাকবে৷
প্রস্তাবনা ০৬
সর্বস্থানে দলমত নির্বিশেষে অসহায়দের ত্রাণ প্রদান নিশ্চিত করা।
দাবীর স্বপক্ষে যুক্তিঃ বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক তৈরিকৃত তালিকা যা নিরপেক্ষ নয়। যার ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রশাসন অবগত রয়েছেন। সুষম বন্টনের মাধ্যমে ত্রাণ প্রদান করা হলে কেউ অভুক্ত থাকবেনা৷
বিকল্প প্রস্তাবঃ জেলা প্রশাসন পূর্ণ যাচাই বাছাই বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে সকল জনপ্রতিনিধিদের সাথে
সমন্বয়পূর্বক যারা ত্রাণ সাহায্য পেয়েছে তাদের নাম/এন আই ডি নাম্বার চিহ্নিত করে অথবা বাসা বাড়িতে গোপন সংকেত এর মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারেন। এতে সুষম বন্টন হবে।
প্রস্তাবনা ০৭
সম্ভবপর হলে অনেকগুলো উপজেলা সমন্বয়ে সৃষ্টি হওয়া বাংলাদেশ এর সর্ববৃহৎ পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে করোনা পরিক্ষা ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে সুদৃষ্টি প্রদান করা ৷
প্রস্তাবনা ০৮
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে করোনায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকা সকল ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য জেলা প্রশাসন এর পক্ষ হতে প্রণোদনা মূলক কিছু ব্যবস্থা করে কর্মক্ষেত্রে উৎসাহিত করা ।
প্রস্তাবনা ০৯
করোনা সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সকল সাংবাদিকবৃন্দদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে কর্মক্ষেত্রে উৎসাহিত করা।
প্রস্তাবনা ১০
বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন এর নামে যে সকল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা বন্ধ করা ৷
দাবির স্বপক্ষে যুক্তিঃ বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন এর নামে গলির মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এলাকার ভিতরের অংশে বিভিন্ন আসর জমানো হয় । প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রশাসন এর টহল দল ও এলাকায় প্রবেশ করতে বাধাপ্রাপ্ত হন৷ ভীতরে অবস্থান করা জনগন বিভিন্ন সমস্যার সন্মুথীন হতে হয়।
প্রস্তাবনা ১১
যে সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে,যারা বিবদমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য পিপিই ব্যবস্থা করে তাদের কে ঝুঁকি মুক্ত রাখা ।
প্রস্তাবনা ১২
রাঙামাটিতে অবস্থান করা বিভিন্ন ধমীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম. মুয়াজ্জিন , ভান্তে, পুরোহিতদেরকে জেলা প্রশাসনের সাহায্য সহযোগীতার তালিকায় নাম অন্তভুক্ত করা । কারন তারা অন্যান্যদের মতো লাইনে গিয়ে সহায়তা গ্রহনে ইতস্তত করেন ।
প্রস্তাবনা ১৩
রাঙামাটি পার্ত্য জেলা একটি অনগ্রসর এলাকা। অত্র এলাকার লোকদের আয় অন্য এলাকার মত নেই । রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করা দিন মজুর, টেক্সীচালক, হোটেল শ্রমিক, অসহায় মহিলা, বোট চালক , মৎস্য শ্রমিক, কাঠ শ্রমিকদেরকে করোনা মহামারি মোকাবেলায় বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য জোর প্রস্তাব করছি ।
প্রস্তাবনার শেষে ‘ করোনা মহামারী মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনকে সকল সহায়তা প্রদানে’র আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, উপরোক্ত বিষয় সমূহ পূর্ণ বিশ্লেষণ করে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিকে করোনা মুক্ত জেলা রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, রাঙামাটি জেলা শাখার প্রস্তাবনা সমূহ জনস্বার্থে বাস্তবায়নের জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।’