একদিনেই প্রসীত বিকাশ খীসা নেতৃত্বাধীণ ইউনাইটেঢ পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতাকর্মীসহ ৭ জন হত্যার পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
এই হত্যাকান্ডের পর পুরো খাগড়াছড়ি জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হত্যাকান্ডের পর সকাল থেকেই বিপুল পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনার পর ঘটনাস্থল খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বীনির্ভর এলাকায় মোতায়েন অবস্থান করছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অথচ বছরখানেক আগেও পাহাড়ের পরিস্থিতি এমন ছিলো না। গেল বছরের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নতুন গঠিত হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন একটি আঞ্চলিক সংগঠন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাহাড়ে দানা বেধেছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের। এসময় তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাকে প্রধান করে প্রতিষ্ঠা হয় এ নতুন সংগঠটির। এই বর্মাই ছিলেন একসময় ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সশস্ত্র গ্রুপের প্রধানের দায়িত্বে।
বেসরকারি তথ্য মতে, গত ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) শীর্ষনেতা শক্তিমান চাকমার হত্যার পর থেকে এ চারমাস পর্যন্ত প্রতিপক্ষের হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ মে শক্তিমান চাকমা দাহক্রিয়ায় যোগদানের পথে দল গড়ে সাড়ে ছয়মাসের মাথায় প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে নিহত হন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৫জন।
সর্বশেষ আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বীনির্ভর এলাকায় প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে এক স্বাস্থ্য সহকারীসহ নিহত হন ৬ জন। নিহতরা হলেন- গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি পলাশ চাকমা (২৯), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা (২৩), পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এল্টনচাকমা (২৮), উত্তরখবং পয্যা গ্রামের বাসিন্দা ও মহাল ছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা (৫৩), একই গ্রামের কান্দারা চাকমার ছেলে রুপম চাকমা (২৭) ও স্বনির্ভর বাজারের চা দোকানদার ধীরাজ (২৬) চাকমা নিহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সন কুমার চাকমা।
এসময় আহত হন আরও তিনজন। আহতরা হলেন- পিসিপির খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্র দ্বিতন চাকমা, বেলতলি পাড়ার বাসিন্দা ফেরেস্টার ত্রিপুরা(৩৫), খাগড়াছড়ি সদরের পশ্চিম নারাঙহিয়ে গ্রামের বাসিন্দা ও পদ্ম চাকমার ছেলে চিজি মনি চাকমা(২৫)। জানা গেছে, তাদের তিনজনকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন টিটু বলেন, দুই আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
হত্যার ঘটনায় চার সংগঠনের প্রতিবাদ:
শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন পিসিপি-যুব ফোরামের ৩ নেতাসহ ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চার সংগঠন।
শনিবার দুপুরে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) প্রচার বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিৃবতি হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতিবাদ জানায় ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতিচাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও শ্রমজীবী ফ্রন্ট’র (ওয়ার্কার্স ফ্রন্ট) সভাপতি সচিব চাকমা ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘ন্যাক্কারজনক’ উল্লেখ করে মামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ইউপিডিএফ’র অভিযোগ, জনসংহতির (এমএন লারমা) অস্বীকার:
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে ৬ জন নিহত ও অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (এমএন লারমা) দায়ী করেছে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ। তবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)।
ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা জানান, ‘আজ সকাল ৮টার দিকে সংস্কারবাদী (জনসংহতি সমিতি- এমএন লারমা) ও মুখোশদের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী স্বনির্ভর বাজারে এসে এলো পাতাড়ি ব্রাশফায়ার করে। এসময় আমাদের সহযোগী সংগঠনের ৩ নেতাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।’
এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা সুধাংকুর চাকমা নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘জনসংহতি সমিতি হত্যার রাজনীতি করে না। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই ঘটেছে। তারা শুধুই আমাদের দোষারোপ করছে।’