শুভ্র মিশু
বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশনের জন্য ৩৩শতক জায়গা অধিকগ্রহণ করা হলেও, নেই ভবন এবং স্টেশনটির কার্যক্রম। ফায়ার স্টেশনের অভাবে গত দুই বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা কার্যালয়সহ অসংখ্য দোকান বসত পুড়েছে বাসিন্দাদের চোখের সামনেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে আর জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত ফায়ার স্টেশন স্থাপন ও কার্যক্রম চালু প্রয়োজন শীঘ্রই।
১হাজার ৯৩১ বর্গকিলোমিটারের বাঘাইছড়ি উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন। পাহাড়ি এই উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বাস। উপজেলাটির জেলা সদর থেকে দূরত্ব নৌ পথে ১৪৪কিলোমিটার ও সড়ক পথে ১৪৬কিলোমিটার। গত প্রায় তিনবছর আগে ফায়ার স্টেশনের জন্য ৩৩শতক জায়গা অধিগ্রহণ হলেও স্টেশন স্থাপন হয়নি এখনো। উপজেলা কোথাও আগুনে সূত্রপাত হলে তা নেভাতে হয় এলাকাবাসীকে সহায়তা করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ফায়ার স্টেশনের সাথে বাঘাইছড়ির দূরত্ব প্রায় ২৭কিলোমিটার। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে সময় লাগে ১ঘন্টা। আর এসময় পর আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর তেমন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
উপজেলাটির পুরোনো বাজার দূরছড়ি বাজার। উপজেলায় কোন ফায়ার স্টেশন না থাকায় শুধু এই বাজারে ২০২১-২২সালের দুইবারের আগুনে পুড়েছে ১০২টি দোকান ও বসত ঘর, ক্ষতি হয়েছে কৌটি কৌটি টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ২১জুলাই আগুনে ৬৯টি দোকান গোডাউন এবং ২০২১সালের ২৪মে ১২টি দোকান ও ২১টি বসত ঘর পুড়েছে ফায়ার স্টেশনের অভাবে। এভাবেই প্রায় সময় নিঃস্ব হন উপজেলাটির বাসিন্দারা।
দূরছড়ি বাজারের রফিক নামে এক বাসিন্দা জানান, আগুন লাগলে আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন, যতক্ষণ পাশাপাশি দোকান বা বাড়ি থাকে ততক্ষণ জলে। এতে এক এক করে আমরা আগুনে সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়। পাশ্ববর্তী দীঘিনালা উপজেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিস আসতে সময় লাগে কমপক্ষে এক ঘন্টা।
শুধু দূরছড়ি বাজার নই উপজেলা সদর এবং আশপাশে বিভিন্ন সময় আগুনে পুড়ে দোকান ও বসত ঘর। এতেও একমাত্র ভরসা দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস।
যার কারণে গত বছর ১৪ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাঘাইছড়ি উপজেলা কার্যালয়টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পুড়ে যায় সকল নথি। পরবর্তীতে দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত বছর ২৯মে বঙ্গলতলী ইউনিয়নে বসত ঘর পুড়ে নিঃস্ব হন ভাগ্যধন চাকমা। কিন্তু বছর পেরুলেও সে ভাগ্যের প্রত্যাশিত ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি এখনো।
উপজেলার খেদারমারা ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশনের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ হলেও এখনো সেখানে স্টেশন স্থাপন হয়নি। যার কারণে আগুন লাগলে তা সহজে নিভানো যায় না। পাশবর্তী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস আসতে একঘন্টার বেশি সময় লাগে, আর যদি বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশন হতো তাহলে সেটি দূরছড়ি বাজারে আসতে সময় লাগতো ১৫মিনিটের মতো। এতে আমাদের আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে যেতো।
বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, ইতিমধ্যে ফায়ার স্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। এখন বাকি স্টেশনটি নির্মাণ কাজ। আমাদের ইউএনও মহোদয়রা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধি সকল পর্যায়ে কথা বলেছে। কিন্তু কোন ভাবেই এটা হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখের বিষয় যেখানে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান দ্রুত হওয়া প্রয়োজন, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এখানে দ্রুত ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রয়োজন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার জানান, ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে আবারো পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েকবছর আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য আর একটি প্রকল্প স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে তা গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল জানান, সারাদেশে ১৫৬টি ফায়ার স্টেশনের কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে রাঙামাটির রাজস্থলী ও লংগদু উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। যতটুকু শুনেছি সামনের প্রকল্পে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন তালিকায় রয়েছে। তবে এই বিষয়ে কোন চিঠি বা অর্ডার আমাদের কাছে এখনো পাঠানো হয়নি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমি উপস্থাপন করেছি, এটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে, আশা করছি হয়ে যাবে। সামনে আবারো লিখবো।