
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি জেলাভিত্তিক সোশ্যাল গ্রুপে ছোট্ট জরিপে সফল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা (https://www.facebook.com/groups/rangamatihilltract) নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ,যার সদস্যের প্রায় সবাই’ই রাঙামাটি জেলার সাথে কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত,সেই গ্রুপে সাতদিন ধরে পরিচালিত এক জরিপে অংশ নেন শ’তিনেক মানুষ। ছোট্ট এই জরিপে অংশগ্রহণকারিরা প্রায় সকলেই রাঙামাটি জেলায় বসবাসকারি এবং রাঙামাটি পৌর শহরের বাসিন্দা।
জরিপে প্রশ্ন ছিলো-‘আপনার বিবেচনায় রাঙামাটির সফল মেয়র কে?’। এই প্রশ্নের জবাবে সর্বাধিক ১৮৭ ভোট পেয়েছেন দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান। দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ৭১ ভোট। তার আগের আরেক মেয়র জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো পেয়েছেন ৩২ ভোট। সাবেক মেয়র ও সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান পেয়েছেন ৮ ভোট।
শুধু ভোট প্রদানই নয়,প্রায় ৫৮ জন পাঠক কিংবা ভোটার তাদের মতামতও জানিয়েছেন এই জরিপে। কেউ বিশেষ কাউকে সফল বলে দাবি করেছেন,কেউবা প্রশ্ন তুলেছেন দায়িত্ব পালনকারি মেয়রদের মেয়াদ নিয়ে,কেউ জানিয়েছেন নিজের ক্ষোভ বেদনা কিংবা আশাভঙ্গের কথা।
তরুন ব্যবসায়ি দেবব্রত চৌধুরী কুমকুম লিখেছেন-‘একজনও নয়। সফল হলে এ শহরের দৃশ্য অন্য রকম হতো।’
সাইয়েদ আলম সানি নামের এক তরুণ লিখেছেন-‘বিগত ২০ বছরে এই রাস্তা দিয়ে আমার পরিবারের চার জন সদস্যের লাশ নিয়ে যেতে হয়েছে। অন্যান্যদের পরিবারের কথা বাদ ই দিলাম। সব মেয়র শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেলো। কাকে কোন যুক্তিতে আমি সফল বলবো?’
ফারিয়া সারোয়ার মৌরি নামের একজন লিখেছেন-‘আমি কাউকে ভোট দিব না।কারণ ভোটের আগে সবাই বলে সবাইকে দেখে দিব। আমি যদি ভোটে জয়ী হই আমি নিজে না খেয়ে গরীব, দুঃখীদের খাওয়াবো। বিধবা নারীদের সাহায্য করব। কিন্তু যখন জিতে যায় তখন তেলের মাথায় তেল দেয়। তখন গরীব দুঃখীদের ও চিনে না।যারা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছে তাদের ও চিনে না।’
ঝিমি কামাল লিখেছেন-‘আমার মতে এদের চারজনের মধ্যে চারজনেই চার রকমভাবে সফল। তবে ওনারা যদি আরো শার্প হতো তাহলে আমাদের পর্যটন শহর রাঙামাটি আরো সুন্দর হতো। আর ব্যর্থতার ও সফলতর ধায় ভার তাদের ওপর কারন চারজনই শপথ গ্রহণ করেছেন রাঙামাটিকে উন্নত করবেন বলে। আমার মতে চারজনই সফল ও ব্যর্থ ও। এককভাবে কাউকে বলবো না কারন চারজনকেই আমি পেয়েছি মেয়র হিসেবে, হয়ত হাবীব আংকেলের সময় একটু ছোট্ট ছিলাম বাট বাকী তিনজনের সময় মোটামুটি সব বুজি, জানি।’
মোহাম্মদ যোবায়ের নামের একজন লিখেছেন-‘কে কতো বছর মেয়র ছিলো সে হিসাবটা এখানে উল্লেখ করা দরকার।’
আইনজীবি মামুন ভূঁইয়া বলেছেন-‘ এখানেও কানা পাবলিক দল খোজে। নিজের মত বলতে কিছু নাই।’
এর বাইরে বাকিরা প্রায় সবাই নিজ নিজ সমর্থিত মেয়রদের গুনগাণ করেছেন এবং নানাভাবে তাদের প্রশংসিত করেছেন।
কিন্তু সাবেক ও বর্তমান মেয়ররা কিভাবে দেখছেন এই জরিপকে ? বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম আমরা তাদের কাছেই।
সাবেক মেয়র এবং সর্বাধিক ভোট পাওয়া হাবিবুর রহমান বলেন-‘যারা বলেন নতুন প্রজন্ম আমাকে চিনে না,তারা এই ছোট্ট জরিপ থেকেই শিক্ষা নিতে পারেন। মানুষ আমরা সময়কালের উন্নয়ন এবং পরিকল্পিত কার্যক্রমকে এখনো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ রেখেছে,এটাই আমার সাফল্য। আমার বিশ^াস দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়,তবে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।’
জরিপের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সারাপৃথিবীতে এমন জরিপ হয়,নানা মাধ্যমে। এইসব জরিপ জনমতেরই প্রতিফলন। এই জরিপটিতে আমি খেয়াল করেছি,তারাই ভোট দিয়েছেন,যারা রাঙামাটির নানান শ্রেণী পেশায় নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সুতরাং কোন জনমতকেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।’
তবে হাবিবের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন জরিপে পিছিয়ে পড়া বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, জরিপ কখনই সামগ্রিক জনমতের প্রতিফলন নয়। এখানে যারা ভোট দিয়েছেন তারাও সবাই রাঙামাটি পৌরবাসির প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাছাড়া এখানে একটি ব্যালেন্সহীনতা ছিলো,কারণ হাবিব ভাই দায়িত্ব পালন করেছেন ১২ বছর,আমি মাত্র ৫ বছর পাড় করছি। সুতরাং ১২ বছরের কাজের সাথে তো ৫ বছরের কাজের তুলনা চলে না। আমাকে যদি আবার মনোনয়ন দেয়া হয় এবং আমি পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারি তবে আমার জনপ্রিয়তা ও সফলতা ওনাকেও অনেক বেশি ছাড়িয়ে যাবে।’
আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন- ‘মানুষ শুধু উন্নয়নের কারণেও ভোট দেয়না। সেটা ভোটের মাঠে হোক কিংবা জনমত জরিপেও হোক। ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ,মানুষের সাথে সম্পর্ক একটা বড় ভূমিকা রাখে।’
মেয়র আকবর বলেন- ‘আমার যেসব কাজ চলমান আছে,সেসব শেষ হলেও মানুষের ভাবনা অনেক বদলে যাবে। মূল্যায়ন পরিবর্তন হবে।’
আরেক সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো বলেন- জরিপে যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন কিংবা দেননি, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি জনপ্রিয় কিনা কিংবা আমার আদৌ কোন জনপ্রিয়তা আছে কিনা,সেটা জানার জন্য পৌরসভা নির্বাচনে ঠিকঠাক মানুষকে ভোট দিতে দেন,তাহলেই বুঝবেন। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির মধ্যেও এবং ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যেই আমি নির্বাচন বর্জন করার পরও ৮ হাজার ৩০০ ভোট পেয়েছিলাম, এটাও মনে রাখতে হবে সবাইকে।’