আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান
বান্দরবানে রাস্তা নির্মাণের নামে কাটা হচ্ছে পাহাড়। মূলত পার্শ্ববর্তী নিচু জমি ভরাটের জন্য কয়েকটি খননযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা পরিবেশ ধ্বংসের কাজটি করছেন। অনুমোদন ছাড়াই প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের রামজাদী এলাকায় কয়েকটি খননযন্ত্র ব্যবহার করে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের নামে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় পাহাড়টি কেটে মধ্যখানে দুভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। অথচ পাহাড়ের অপরপ্রান্তে কোনো বসতি নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত রামজাদী এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে ফসলি নিচু জমি ভরাটের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে।
কাজটির তদারকের দায়িত্বে থাকা টিটু বড়ুয়া বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদ রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটেছিল। কিন্তু পরিত্যক্ত রাস্তাটি নতুন করে জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ইটের রাস্তা তৈরির জন্য একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে শুনেছি।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা কোম্পানি বলেন, পাহাড় আগেই কাটা হয়েছিল। এখন রাস্তা নির্মাণের জন্য কেটে ঢালু কমানো হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি আমি নই, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত কান্তি দাস করছেন। আমি শুধু খননযন্ত্র ও ট্রাকসহ মালামাল সরঞ্জামগুলো দিয়ে সহযোগিতা করছি।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা অজিত কান্তি দাস বলেন, ‘জামছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল রাস্তাটি। ছোটখাটো যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে পাহাড়ের মাটি কেটে রাস্তাটি নিচু করা হচ্ছে। মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি মূছা কোম্পানি আর আমি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ের অপর প্রান্তে কোনো গ্রাম, জনবসতি নেই। শুধু রামজাদী এলাকায় নিচু জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। এখন নবগঠিত জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা নির্মাণের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে এলাকাটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষায় বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ ধ্বংসকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে জামছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্যচিং প্রু মারমার মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরিবেশ অধিদফতর বান্দরবান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফখরুল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটা অপরাধ। রাস্তা নির্মাণ বা ফসলি জমি ভরাটের জন্য পাহাড় কাটার কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।