
এবার রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণের অভিযোগ তুলেছে খোদ সংগঠনটির দপ্তর বিভাগ। মঙ্গলবার বিকালে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. নুর আলম ও উপ-দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম (স্বাধীন)।
গণমাধ্যমে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রলীগের এই দুই নেতা বলেন, ‘আমরা দুইজন দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর ও উপ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের সম্মেলন সংক্রান্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এমতাবস্থায় সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিট থেকে বিষয়টি সর্ম্পকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে আমরা বিষয়টি সর্ম্পকে তাদের কিছুই জানাতে পারছি না।’
বিজ্ঞপ্তিতে তারা অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দপ্তর সম্পাদকের কাজ উল্লেখ করা রয়েছে। এরমধ্যে সভার কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রক্ষা করা ও দপ্তর সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদি পরিচালনা করা। এছাড়াও রয়েছে সংগঠনের ই-মেইল একাউন্ট ও ওয়েবসাইট পরিচালনার দায়িত্ব। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ ধরণের কোনো কাজের বিষয়ে আমরা অবগত না। সম্মেলন সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা জেলা ছাত্রলীগের এক তৃতীয়াংশ সদস্যের সাথে কথা বলে জেনেছি তারাও বিষয়টি সর্ম্পকে কেউ জানেন না।’
অভিযোগে আরও বলা আছে, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই সকল কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছেন! তাহলে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আমাদের কী দায়িত্ব? জেলা ছাত্রলীগের এ যাবৎকালে সকল সিদ্ধান্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিলো। নিয়মানুসারে, ছাত্রলীগের সকল সিদ্ধান্ত নিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নিতে হয়। অথচ সম্মেলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভা না করেই এককভাবেই বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করেন। যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এ ধরণের স্বেচ্ছাচারিতার উদ্দেশ্য আমাদের বোধগম্য নয়। এতে করে সংগঠনের এক তৃতীয়াংশ সদস্যের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরণের ঘোষনা কেন্দ্র করে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার দায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের।’
তবে দপ্তর বিভাগের এই দুই নেতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, ‘আমি নিজে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। দপ্তর সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় মন্ডলীর অধিপতি আমি। এই বিষয়ে তারা যে অভিযোগ তুলেছে, সেটা তাদের সাংগঠনিক ভুল ও মনগড়া সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি, তারা সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ না করেই স্ববিরোধীতা করছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ আমার সেক্রেটারির সাথে যে কথা হয়েছে, আমিও তার সাথে একমত।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২ জুন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কাউন্সিল না হলেও এর পরদিন জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি, সাইফুল আলম রাশেদ ও কাউসার রুমিকে সহ-সভাপতি, প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সালাউদ্দিন টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়।
এর প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক জেলা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের একাংশ। এরপর দীর্ঘ আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করতে পারেনি এই ৬ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগ। বরং সাংবাদিকদের মারধর, পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি ছিনতাই, মাদক ও মোটরসাইকেল চুরি ব্যবসায় জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সম্পৃক্ততা,ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে বহিষ্কার,নিজ সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের মারধরসহ নানা অপকর্মের কারণে বরাবরই বির্তকিত ছিলো রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ। প্রায় চার বছর পর ২০১৮ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা হলেও এই কমিটি নিয়েও বির্তকের শেষ ছিলো না। ছাত্রলীগের এহেন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ জেলা ছাত্রলীগকে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই সকল ইউনিট ও জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ করতে নির্দেশ দেয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগ সকল ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করলেও নিজেদের জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা না করে তালবাহানা করছে বলে অভিযোগ একাংশের। তাদের অভিযোগ, এক বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত যে কমিটি ,তারা চারবছর পরেও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অযোগ্যতা প্রমাণ হয়ে গেছে। দ্রুত জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।