
বান্দরবানে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ভান্তের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের পর প্রাচীন এ বিহারের প্রায় তিনশ বছরের পুরনো একটি বুদ্ধপূর্তি চুরির শঙ্কায় সীলগালা করা হয়েছে। বৌদ্ধ বিহারের মন্দির পরিচালনা কমিটির দ্বন্দের জেরে প্রচীন মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি’টি বেহাত হতে হওয়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নির্দেশণায় পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পরিষদের লোকজন’সহ মন্দিরে গিয়ে বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রাচীন এই বুদ্ধমূর্তি’টি সীলগালা করায় দূর্শণার্থী পূজারী এবং বৌদ্ধ বিহারের ধর্মীয় গুরু’রাও মূর্তিটির পূজা করতে পারছেনা। এ নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা জানায়, বান্দরবানের রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার মন্দিরটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। বিহারের প্রধান ভান্তের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালে বিহারের প্রধান অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন উপঞঞা জোত মহাথের প্রকাশ উচহ্লা ভান্তে। গতমাসের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালের বিহারের অধ্যক্ষ ও দি ওয়াল্ড বুদ্ধ শাসন সেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় গুরু উচহ্লা ভান্তে’র মৃত্যুর গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে ১৩ এপ্রিল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হওয়ায় প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে পাহাড়ের অন্যতম এই বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুর মৃতদেহ এখনো বান্দরবান আনা হয়নি। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া একটি বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মৃতদেহ বান্দরবান আনা হবে বলে জানাগেছে। এদিকে বিহারের প্রধান ভান্তের মৃত্যুর পর তারই শিষ্য মিয়ানমার ফেরত বৌদ্ধ ভিক্ষু বীর চান পঞো থের’কে স্থলাভিষিক্ত করতে চাইছেন বিহারের মন্দির পরিচালনা কমিটি। তবে বিষয়টি বান্দরবানের স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা মেনে নিতে পারছেন না। এ নিয়ে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বন্দ তৈরি হয়েছে। দ্বন্দের জের ধরে বিহারের প্রাচীন প্রায় তিনশ বছরের পুরনো মূল্যবান একটি বুদ্ধমূর্তি চুরির শঙ্কা তৈরি হওয়ায় বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেন জেলা পরিষদ।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বী শ্রীলজ্যোতি বড়ুয়া বলেন, বুদ্ধ মূূর্তিটি বিহারের মধ্যে গ্লাস দিয়ে ঘেরাও করা স্থানে সংরক্ষিত থাকে। মন্দিরের প্রার্থণার জন্য আসা পূজারীরা গ্লাসের বাহিরে থেকে মূর্তিটি দর্শন এবং পূজা করতেন এতদিন। শুধুমাত্র নববর্ষের সময় সাঙ্গু নদীর চরে বুদ্ধমূর্তি স্নান উৎসবের জন্য মূর্তি’টি বের করা হত। এবছর করোনা দূর্যোগ উৎসব’টি হয়নি। বুদ্ধমূর্তি স্নান অনুষ্ঠানে মাথায় করে নেয়া মূল্যবান মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তি’টি হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো প্রাচীন মূর্তি। এই মূর্তি স্নানের পানি বোতলে করে পূজারীরা বাসায় নিয়ে যান। বিভিন্ন রোগ এবং অশুভশক্তির হাত থেকে ঘর-মানুষদের রক্ষায় মূর্তির স্নানের পবিত্র পানি ছিটানো হয়।
কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ মন্দিরের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াইচা প্রু মাস্টার বলেন, প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেওয়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক। সিলগালা করার পর বৌদ্ধ মন্দিরে উপাসকরা প্রবেশ করতে পারলেও মূর্তিটি সিলগালা থাকায় দর্শণার্থীরা সেখানে কেউ যেতে পারছে না। অবিলম্বে মূর্তিটি পূজার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে সীলগালা’র বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের পুরনো প্রাচীন মূল্যবান বুদ্ধমূর্তিটি চুরির আশঙ্কায় পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে মূর্তিটি সিলগালা করা হয়েছে।