মো. মহিউদ্দিন, বাঘাইছড়ি
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় এ মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দান। চীবরদান উৎসবকে ঘিরে পাড়া মহল্লায় শুরু হয়েছে ফানুস (আকাশ প্রদীপ) তৈরির মহোৎসব। এবার কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ফানুস বা আকাশ প্রদীপ উড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানব জ্যোতি চাকমা। রঙিন কাগজ জোড়া দিয়ে, বাঁশের রিং ও মোমের সাহায্যে একেকটি ফানুস তৈরির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুইশ’ টাকা। রোববার সকালে উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের তুলাবান নবরত্ন বৌদ্ধ বিহার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তুলাবান এলাকার ১৩টি পাড়া মহল্লার যুব সমাজ একত্রিত হয়ে ফানুস তৈরির কাজ করছেন।
এসময় কথা হয় সামত্রিপাড়া, হেডম্যান পাড়া, সচিমহোন পাড়া, পিত্তি পাড়া, ত্রিপুরা পাড়া ও দার্জিলিং পাড়ার যুবকদের সঙ্গে। তারা তিন থেকে পাঁচজন মিলে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে মাঠে ফানুস তৈরির কাজ করছে। তাদের একজন ধুতি চাকমা জানান, তুলাবান নবরত্ন বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু হবে ৩০ অক্টোবর। চলবে ৩১ অক্টোবর রাত পর্যন্ত। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা তুলাবান গ্রামের ১৩টির প্রতিটি পাড়ায় ১০০টি করে মোট ১৩০০ ফানুস তৈরির জন্য কাজ করছে। এছাড়াও উপজেলার জীবতলী, তালুকদার পাড়া, আর্যপূর, জীবঙ্গছড়া, খেদারমারা, রূপকারী, সাজেকসহ বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কোন ধরনের সরকারি সহায়তা ছাড়াই নিজেদের উত্তোলন করা গ্রামবাসীর চাঁদার টাকাতেই এসব ফানুস তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এসব ফানুস তাদের পূণ্য এনে দিবে এবং নির্বাণ লাভে সহায়ক হবে। তুলাবান ছাড়াও উপজেলার প্রতিটি বৌদ্ধবিহার ও পাড়া-মহল্লায় কঠিন চীবর দান চলবে টানা একমাস। তাই এরই মধ্যে উপজেলার সকল বৌদ্ধ বিহারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরুর পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় শতশত ফানুস তৈরির কাজ চলছে। কঠিন চীবরদান হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় আচার ও উৎসব, যা সাধারণত বাংলাপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা (ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা) পালনের এক মাসের মধ্যে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীগণ পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী দান করে থাকেন।
উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানব জ্যোতি চাকমা বলেন, এবার গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এখনো সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের একটি পবিত্র অনুষ্ঠান। তাদের এই অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যাতে পালন করতে পারে; সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।