নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই ॥
রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাজস্থলী-চন্দ্রঘোনা সড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় সময় এই সড়কে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। গত তিন মাসে এই সড়কে ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জনের অধিক আহত হয়েছে। এছাড়া রাজস্থলী-চন্দ্রঘোনা সড়কে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে হওয়ায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উক্ত সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সড়কে আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, নিয়ম ভঙ্গ করে গাড়ি ওভার লোডিং, ওভার টেকিংয়ের প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গতিতে গাড়ি চালানো, সড়ক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল এবং ঝুঁকিপূর্ণ আঁকাবাঁকাসহ চলাচলের অনুপযোগী সড়ক। উল্লিখিত এসব কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
চন্দ্রঘোনা ও রাজস্থলী থানা পুলিশের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, চলতি বছরের গত তিন মাসে রাজস্থলী, বাঙ্গালহালিয়া, চন্দ্রঘোনা সড়কে ছোট বড় ১০ থেকে ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় যাত্রী, চালক ও চালকের সহকারীসহ ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এসব দুর্ঘটনায় ২০ জনের অধিক মানুষ আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুধু গত মার্চ মাসেই রাজস্থলী সড়কে ট্রাক-মাহিন্দ্রা মুখোমুখি সংর্ঘষে ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি চন্দ্রঘোনা ফেরীঘাটে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী সহ ২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
তবে পথচারী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানো, মাত্রাতিরিক্ত গতি ও অভারটেকিং প্রতিযোগিতা, চালকদের মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, সড়ক আইন না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে গাড়ি চালকেরা জড়িত থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।
বাঙ্গালহালিয়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি শামসুল আলম জানান, বাঙ্গালহালিয়া, পদুয়া, রাজারহাট ও রাজস্থলী সড়কে দিনদিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
বাঙ্গালহালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক কামরুজামান জানান, রাজস্থলী-চন্দ্রঘোনা সড়কে চালকের ওভারস্পীড, ওভারটেক ও ওভারলোডের কারণে এসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে অধিকাংশ চালকের দুর্বলতা। বেশি টাকা উপার্জন ও একাধিক ট্রিপ মারতে ঘুমচোখে গাড়ি চালানো এবং ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বহন করতে গিয়েই দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন।
এবিষয়ে রাজস্থলী থানার ওসি জাকির হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গত কয়েক দিন আগে পুলিশের উদ্যােগে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ঈদকে সামনে রোখে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের সচেতন করতে এবং যাত্রা নিরাপদ করতে তারা এই তৎপরতা শুরু করেছে। বিভিন্ন সময় অভিযান কালে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, অনুমোদনহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলাসহ নানামুখী কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।