ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ॥
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার উপজেলা সদর হাসপাতাল চত্বরে গত চার বছর ধরে চটপটি আর ফুচকা বিক্রি করে আসছেন মো. সেলিম(৪০)। কি শীত, কি বর্ষা প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে সন্ধ্যা অবধি তিনি তাঁর এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এই চটপটি বিক্রি করে তিনি ৫ সদস্যের সংসারকে টেনে আনছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাপ্তাই উপজেলা সদর হাসপাতাল চত্বরে তাঁর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
এই চটপটি বিক্রেতা জানান, তাঁর আদি নিবাস চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলায়। সেই ছোট বেলায় সংসারের অভাব অনটনে কাজের সন্ধানে কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়িতে চলে আসেন। প্রথমে খুব কষ্টে জীবনধারণ করলেও পরে রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই কাজ করেছেন তিনি। এরইমধ্যে তিনি বিয়ে করেছেন এবং তাঁর ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। তাই ৫ জনের সংসার চালানো খুব কষ্টসাধ্য বিধায় জীবনের সুখের জন্য তিনি গত ৪ বছর ধরে একটা ভ্যান কিনে এই চটপটি ও ফুসকা ব্যবস্থা শুরু করেছেন।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেলিম জানান, আগের মতো রাজমিস্ত্রীর সহকারীদের বেতন পর্যাপ্ত না হওয়ায় কিছু ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করি। প্রতিদিন গড়ে ৭০০থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হয় তাঁর। প্রতিদিন গড়ে ২শত হতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শত টাকা পর্যন্ত লাভ হয় তাঁর। এই লাভের টাকা দিয়ে তিনি ৫ জনের সংসার চালানো হতে ৩ ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে আসছেন। তাঁর বড় ছেলে মো. সেলিম কাপ্তাই কর্ণফুলি সরকারি কলেজে একাদশ প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছেন। মেজ মেয়ে কলি আক্তার বড়ইছড়ি কর্ণফুলি নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে এবং ছোট মেয়ে খুশি আক্তার একই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন।
সেলিম জানান, তাঁর স্বপ্ন যেন তাঁর ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষের মতো মানুষ হয়। তখনই আমার হাড়ভাঙা পরিশ্রম সার্থক হবে। সেলিমের দোকান হতে প্রায়ই চটপটি খান উপজেলা সদরের বাসিন্দা মো. জসিম, মিন্টু ত্রিপুরা, অনিন্দ্য পাল। তাঁরা জানান, সেলিম ভাইয়ের চটপটি স্বাদে এবং গুণগত মান অনেক ভালো।
উপজেলা সদর হাসপাতালর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ল্যাব) অমর চন্দ্র দাশ জানান, অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে কলিগদের নিয়ে মাঝে মাঝে তাঁর চটপট আর ফুচকা খাই। খুব ভালো লাগে তাঁর এই চটপট আর ফুচকা।