‘বাড়িঘর, স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব আমি। সরকার বাড়িঘর বানিয়ে দিবে শুনেছি। কিন্তু বাড়িঘরের চেয়ে আমার কাছে আমার দুটি ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত। আমার যদি একটা কর্মসংস্থান হতো তাহলে ছেলে মেয়েগুলো লেখাপাড়া শিখিয়ে মানুষ করতে পারতাম এবং সাথে আমিও সুন্দরভাবে বাচাঁতে পারতাম।’ এভাবে দুঃখের কথা বলছিলেন রাঙামাটিতে গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে স্বামী হারানো বিধবা রাবেয়া আক্তার। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি মেডিকেল ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। ছেলের নাম রাকিব হোসেন বয়স ছয় বছর, মেয়ের নাম ফারিয়া বয়স তিন বছর। আমাদের বাসা ছিল এনএসআই এর অফিস সংলগ্ন। গত ৯ জুন আমার বাসার ওপর গাছ পড়ে ঘরটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পশেই আমার বোনের বাসায় আমরা অবস্থান নিই। ১৩ জুন সকাল আটটার দিকে আমার স্বামী দরবেশ আলীর কাছে ফোন আসে। ফোনটি করে তার ভাগিনা। তারা থাকতেন রূপনগর এলাকায়। ফোনে বলেন, মামা আমাদের ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে, বাসা থেকে মালগুলো বের করতে হবে। তাড়াতাড়ি লোকজন নিয়ে আসেন। আমার স্বামী তাদের সাহায্য করার জন্য বাসা থেকে বের হন। এটাই ছিল আমার সাথে ওনার শেষ দেখা।’
‘তার ঘন্টা দুয়েক পর আমার এক মামী কলেজ গেইট থেকে ফোন করে জিজ্ঞাস করে, তোর স্বামী কোথায়? আমি বলি কিছুক্ষণ আগে বের হয়েছে। ভাগিনার বাসায় গিয়েছে। তখন তিনি বলেন দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখ ওখানে আছে কিনা। তখনও আমি কিছু জানতাম না। আসলে কি ঘটেছে। আমার পাশের বাসার মামীকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে অনেক খোঁজা খুঁজি করি কিন্তু আমার স্বামীকে পাইনি। তখন ওনার নাম্বারে কল দি, তখন নাম্বার বন্ধ পাই। দ্রুত ভাগিনার বাসায় যাই। গিয়ে দেখি ২৫ হাতের ঘরটি ৫০ ফুট নিচে মাটিতে চাপা পড়ে আছে। ঘরের কোন অস্তিত্বও নাই। তিন পাহাড়ের মাটি এমনভাবে ¯্রােতের মতো নেমেছে, নতুন আরেকটা পাহাড় তৈরি করেছে সেখানে। ঘটনার পর থেকে ৭-৮ দিন পর্যন্ত অনেক খুঁজেছি কিন্তু সেখানে ভাগিনা, ভাগিনার বউ আর আমার স্বামীর কারো লাশ আমরা খুঁজে পায়নি। সবাই অনেক চেষ্টা করেছে।’
রাবেয়া আক্তার আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসক এবং জেলা পরিষদ থেকে বিশ হাজার করে টাকা দিছে যা আমার সন্তানের জন্য পনের বছরের ডিপোজিট করে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এখন যদি সরকার ঘর করে দেয়, তাতে আমার ছেলেমেয়েগুলোকে কি খাওয়াবো। কিভাবে পড়াশুনা করাবো। আমি তো কোন চাকরি করি না। সরকার যদি আমাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমার আয় দিয়ে আমার ছেলে মেয়েগুলোকে মানুষ করতে পারতাম।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে ১২০ জনের মতো মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িঘর হারা মানুষগুলোর জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। এখন পর্যন্ত ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন অবস্থান করছেন। সরকারি হিসাবে যে পরিমাণ তাদের হাতে অর্থ মজুদ আছে তাতে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত চালাবো যাবে এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।