
শ্যামল রুদ্র, রামগড় ॥
গাছির অভাবে খাগড়াছড়ির রামগড়ের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য খেজুরগাছ থাকলেও রস আহরণের উপযোগী করা যায়নি। ফলে খেজুর রসের আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রস আহরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় খেজুর গুড় এখন দুষ্প্রাপ্য।
কয়েক বছর আগেও রামগড়ে খেজুরগাছে রসের হাঁড়ি ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখা যেত। এখন শীত মৌসুমে খেজুরের রস পাওয়ার কোন উপায় নেই। কদাচিৎ আশপাশের এলাকা থেকে চড়া দামে রস সংগ্রহ করলেও ভেজালে ভরপুর এসব খেজুর রস। গাছকাটার লোক(গাছি) না থাকায় মূলত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শীত মৌসুমের মজাদার খেজুর গুড় খেতে পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
পেশা পরিবর্তন, রস চুরি, নতুন কেউ এ কাজে না আসাসহ বেশ কিছু কারণে হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। আগে প্রত্যেক গ্রামে একাধিক লোক থাকলেও এখন কয়েক গ্রাম খুঁজেও গাছি পাওয়া যায় না।
সরেজমিন দেখা যায়, রামগড়ের মহামুনি, সোনাইপুল, দারোগাপাড়া, ডেবারপাড়, গর্জনতলী, কালাডেবা, বল্টুরাম, পাতাছড়া প্রভৃতি এলাকায় রাস্তার দুপাশে, খেলার মাঠ ও বাড়ির আশপাশে অসংখ্য খেজুরগাছ দন্ডায়মান। পূর্বে শীতের সময় গাছগুলো প্রস্তুত করা হলেও বর্তমানে অবহেলায় পড়ে আছে । রস সংগ্রহের উপযোগী করা হয়নি। গাছি খুঁজে পাচ্ছেন না মালিকেরা।
দারোগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমরান হোসেন জানান, তাঁদের বেশকিছু খেজুরগাছ আছে। আগে এসব গাছ বর্গা দেওয়া হতো। কিন্তু বছর তিনেক ধরে গাছি না থাকায় গাছগুলো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয়নি। অবহেলায় পড়ে আছে গাছগুলো।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, গ্রামের মেঠো পথে খেজুরগাছের দীর্ঘ সারিতে। বাঁশের কঞ্চির নলির সঙ্গে বাঁধা রসের পাত্র এখন নজরে আসে না। গত বছর রস কেনার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। এবার পাশের এলাকা থেকে চড়া দামে রস কিনেছেন। অথচ একসময় রামগড়েই ১০ থেকে ১৫ টাকায় লিটার প্রতি রস বিক্রি হতো।
মো. জসিম উদ্দিন নামের এক গাছি জানান, গাছ কাটা খুবই কষ্টসাধ্য। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। গাছে ওঠা, গাছ চাঁছা এবং গাছে রসের পাত্র বসানোর জন্য অনেকবার ওঠা নামা করতে হয়। কিন্তু মালিকেরা ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয় না। তাছাড়া রস থেকে গুড় উৎপাদনে যে খরচ হয়, তাতে কৃষকদের পোষায় না। এসব কারণে অনেক গাছি এখন অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
মুন্সী মাঝি নামের আরেক গাছি জানান, খুব কষ্টের কাজ এটি। তরুণেরা এ কাজে আসতে চায় না। তাই গাছিসংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, অনেক সময় রস চুরি হয়। কষ্ট করে গাছ চেঁছে-ছিলে পাত্র লাগানোর পর সকালে দেখা যায় রস চুরি হয়ে গেছে। এ কারণে গাছ কাটতে ইচ্ছে হয় না।
রামগড় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী আহমদ জানান, প্রশিক্ষিত গাছি নেই। এ কাজে নতুন প্রজন্মের কেউ এগিয়েও আসছে না। আগে যারা এ কাজে ছিল বয়সের কারণে এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।