
কাউখালীতে সামিয়া ডেইরী ফার্মে খড়ের সাথে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দেয়া বিষে আট গরুর মারা গেছে। অসুস্থ রয়েছে আরো চৌদ্দটি গরু। গত ১৯ জুলাই বুধবার রাত আটটার দিকে নাইল্যাছড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
বিষ যুক্ত খাবার খাওয়ায় গরুগুলোর মারা যেতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মঈনুল ইসলাম।
রবিবার সরেজমিন ঘুরেজানা গেছে- উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দুরত্বে নাইল্যাছড়ি এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৩০) ইচ্ছা ছিল বিদেশ পরিজমানোর। প্রবাসের পরাধীন জীবনে না থেকে পরিবারের কথা চিন্তা করে আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। দেশেই কিছু একটা করার চেষ্টা শুরু করেন। শেষমেষ একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের আওতায় গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধজাত গরুর ফার্মের কথা মাথায় রেখে প্রবাসী বড় ভাইয়ের সহযোগীতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কৃষি ব্যাংক কাউখালী শাখা হতে ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। পরিবারের সহযোগীতা ও ব্যাংক ঋণ সব মিলয়ে তার এ ফার্মে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।
দেশী বিদেশী ২২ টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলো ফার্মটি। ফার্মের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বর্গাও দিয়েছে ১০টি গরু। দিনরাত পরিশ্রম করে ফলও দেশে শুরুকরেছিলো নজরুল। কোবানের ঈদে গরু বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করে রেখেছিলো আগে থেকেই।
কিন্তু ১৯ জুলাই নজরুলর সবকিছু তছনছ করে দিল মানুষরূপি কিছু পশু। বিকেলে গরুকে খাবার দিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তে যায় নজরুল। এরই মধ্যে কোন এক ফাঁকে খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। নামাজ শেষে নজরুল ফার্মে এসে দেখেন ২২টি গরুর মধ্যে ৮টি গরুই মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। একটু আগেই যে গরুগুলা সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছিল তার চোখের সামনেই কাটা কবুতরের মত ছটফট করতে দেখে নিজেই হুশ হারিয়ে ফেলেন নজরুল।
স্থানীয়রা কাউখালী প্রাণি সম্পদ অফিসে খবর দেন। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোঃ মঈনুল ইসলাম যান ঘটনাস্থলে। তিনি যাওয়ায় আগেই আটটি গরুই মারা যায়। যার বাজার মুল্য ৮ লক্ষ হবে জানিয়েছেন নজরুল। এর আগে স্থানীয় প্রাণি চিকিৎসক ধনপতি সরকারও গরুগুলাকে বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
ধনপতি সরকার জানান, দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে অবলা প্রাণী নিয়ে কাজ করছি। অনেক গরু ছাগল আমার সামনে মরে গেছে কিন্তু কোন দিন এত খারাপ লাগেনি। কিন্তু এক সাথে এতগুলো আমার সামনে মারা যেতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
পাড়ার লোকেদের কাছে পরিচিরত পরিশ্রমী, নম্র, ভদ্র নজরুলে খামারের গরু মারা যাওয়ার খবর শুনে মানুষ ছুটে আসে তার ফার্মে। এলাকাবাসীর দাবী যেসব নরপশু এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে।
ক্ষতিগস্ত নজরুল জানান, আমার সাথে কারো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে, কিন্তু আমার নিরীহ প্রাণীগুলো কি দোষ করেছে। বুঝতে পারিনি আমার এ উন্নতি কারো বিষাদের কারণ হবে। এর বিচার আমি আল্লার দরবারে দিলাম।
কাউখালী থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে কাউখালী থানায় মামলা রুজু করেছে বাদী নজরুল ইসলাম। তদন্তস্বাপেক্ষে আসামীদের খুজে বের করার চেষ্টা চলছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মঈনুল ইসলাম এর সাথে এ প্রতিবেদকের ফোন আলাপ হলে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ৮টি গরু মারা যায়। ১৪টি গরু অসুস্থ রয়েছে। গুরু গুলাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মারা যাওয়া গরু গুলো ও খাবার থেকে কিছু নমনু সংগ্রহ করে ঢাকা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ উপরের মহলের মানুষের সামান্য দৃষ্টি হয়ত তার এত বড় ঋণ থেকে মুক্তি ও তাকে আবার একবার বাচাঁর সুযোগ দিতে পারে বলে আশা করছেন তরুন এ খামারী নজরুল।