
খাগড়াছড়িতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে আসামিকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ডে দন্ডিত ও মামলার অপর ৪ আসামিকে খালাস দিয়েছে। সোমবার দুপুরে খাগড়াছড়ির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
মৃত্যুদন্ড রায় প্রাপ্ত আসামি হলেন মো. মিজানুর রহমান (২৩)। তিনি গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ির বাজার পাড়ার এরফান আলীর ছেলে।
রায়ে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে স্ত্রী সালমা আক্তারকে যৌতুকের জন্য পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১১(ক) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
এই মামলায় অপর ৪জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় নিহত গৃহবধূ সালমা আক্তারের শ্বশুর এরফান আলী, শ্বাশুড়ি সাজেনুর বেগমসহ তাদের অপর এক ছেলে ও এক মেয়েকে খালাস দেয়।
এদিকে মামলার বিবরনে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ৩০ শে মার্চ আসামি মিজানুর রহমানের সাথে গৃহবধূ সালমা আক্তারের বিবাহ হয়। এরপর থেকে স্বামী মিজানুর রহমান যৌতুকের দাবি করে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো তার উপর। এ নিয়ে সামাজিক সালিশ বৈঠকও হয় একাধিবার। সর্বশেষ একই বছরের ২৭ ডিসেম্বরে আসামি পক্ষ তাদের বসত ঘরের সামনে উঠানে গৃহবধু সালমা আক্তারকে এলাপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে জখম করে। পরে স্বামী মিজানুর রহমান ঘর থেকে প্লাস্টিকের বোতল ভর্তি পেট্রোল এনে তার স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দিয়ে ম্যাচের কাঠি মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সালমার কোমর হতে মাথা পর্যন্ত ঝলসে যায়। পরে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৫ সালের ২৯ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে বাবার বাড়িতে মারা যান সালমা আক্তার।
এই ঘটনায় নিহত সালমার বড় ভাই মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে গুইমারা থানায় মামলা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১জুলাই পুলিশ সালমার স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুরী, দেবরসহ ৫জনকে আসামী করে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা চলাকালীন রাষ্ট্রপক্ষ ৬ জনের স্বাক্ষ্য শেষে প্রায় ৪ বছরের মাথায় আদালত এই রায় ঘোষনা করেন।
এদিকে, রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত সালমার ভাই নুরুজ্জামান ও তাঁর পরিবার।