সারাবিশ্ব মরণব্যাধি করোনার প্রার্দুভাবে যখন থমকে দাড়িয়েছে, অর্থনীতি রক্ষা আর কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টায় চিন্তিত বিশ্ব নেতারা। তখনই বিশ্বজুড়ে আলো দেখাচ্ছে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিছু মানবতাবাদী মানুষ। তাদের দেখানো ছোট ছোট আলোর কণাই হয়তো বিশ্বকে আবার নতুনভাবে জেগে ওঠার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেরও নানা প্রান্তে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে অনেক মানুষ। এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কাজে পিছিয়ে নেই পার্বত্য জেলা রাঙামাটির এই মানুষগুলোও। পাহাড়ের সবচে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ‘পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডট কম’ ইতিমধ্যে করোনা ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন মহানুভব মানুষের খবর শুনিয়েছে পাঠকদের। একইভাবে আজকে উপস্থাপন করা হলো করোনা প্রাদুর্ভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের পাশে মরহুম আব্দুল বারী মাতব্বর ফাউন্ডেশনের দাঁড়ানো ও এর পৃষ্ঠপোষক হাজী মো: মুছা মাতব্বরের ফাউন্ডেশনটি নিয়ে ভাবনা কথা।
দেশে করোনার সংক্রামণ রোধে গত ২৬মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে সারাদেশের মতো হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটির মানুষও কর্মহীন হয়ে পড়ে। আর তাদের মধ্যে যেসব মানুষ দিনে এনে দিনে খায় তারা পড়েছেন সবচে বেশি বিপাকে। এইসব বিপাকে পড়া মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকারও সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ব্যক্তিগত সহযোগিতায় সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। মূলত: নিজের পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের নামেই তিনি সবচে বেশি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে আছেন।
গত ৩১মার্চ থেকে রাঙামাটিতে কর্মহীন হয়েপড়া মানুষের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মরহুম আব্দুল বারী মাতব্বর ফাউন্ডেশন। প্রথম দিকে ফাউন্ডেশনটি রাঙামাটি শহরের কর্মহীন মানুষকে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, কখনো ওএমএস’র দশটাকা দামে চাল কেনার অর্থ উপহার দিলেও, ক্রমান্বয়ে এই ত্রাণ কাজে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। এখন কোন তালিকা ছাড়াই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সড়কে মিনিট্রাকে করে প্রতিদিন শতশত মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন নানা প্রকারের সবজি।
- ৬ হাজার মানুষকে চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রদান
- ১০-১২ হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে সবজি
- ওএমএস এর চাল কেনার টাকা দিয়েছেন ৮০০ পরিবারকে
ফাউন্ডেশনটির পৃষ্ঠপোষক রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মো. মুছা মাতব্বর জানিয়েছেন, গত ৩১মার্চ থেকে মরহুম আব্দুল বারী মাতব্বর ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। শুধুমাত্র মানুষের পাশে থাকার জন্যই আমি এই কাজটি করছি। করোনার যে ক্রান্তিকাল আমরা অতিক্রম করছি, তা আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে হবে। সে তাগিদ থেকে এই ফাউন্ডেশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ফাউন্ডেশনটির পক্ষ থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৬ হাজার পরিবারকে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রদান করা হয়েছে। আর গত কিছুদিন ধরে শহরের বিভিন্ন মোড়, পাড়া মহল্লায় ট্রাকে করে সবজি বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১০-১২ হাজার মানুষের মাঝে।
মুছা মাতব্বর আরো জানান, করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর দিক নিদের্শনা সবাই পালন করলে আমরা করোনা প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পাব বলে মনে করি। তিনি সমাজের যে সকল বিত্তবান মানুষ আছেন, তাদের প্রতি আহবান জানান করোনা প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়েপড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এভাবে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে করোনাকে জয় করার কথা জানান তিনি।
‘করোনা যতদিন থাকবে,ততদিন মানুষের পাশে থাকবে মরহুম আব্দুল বারি মাতব্বর ফাউন্ডেশন’- একথা জানিয়ে মুছা মাতব্বর বলেন, ফাউন্ডেশন যে সহায়তা করছে তা পুরোটাই আমাদের পারিবারিক অর্থায়নে হচ্ছে।’
আব্দুল বারী মাতব্বর ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুছা মাতব্বরের সহধর্মিনী শামীম আক্তার। সারাবছরই মানুষের জন্য নানাভাবে কাজ করা এই নারী বলেন, ‘করোনায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব,আমরা সেই কাজটিই করছি। সারাবছর নানাভাবে মানুষের পাশে থাকলেও এই ক্রান্তিকালে আরো বেশি করে মানুষকে সেবা করতে পেরে আমার নিজেরও অনেক ভালো লাগছে। আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না,কি যে আনন্দ লাগে,যখন একজন মানুষ এই সামান্য সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে হাসিমুখে ঘরে ফেরে। দিনশেষে এই হাসিমুখগুলোই তো আমাদের জীবনের সবচে বড় অর্জন।’