কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এক পাহাড়ী গ্রামে

এ যেনো ঘৃণা আর ভালোবাসার মিশেলে তৈরি হওয়া চলমান শংকা আর অবিশ্বাসের মাঝে একটি অসাধারণ বাস্তবতা। যখন করোনা ভাইসারের কারনে সকল শিল্প কলকারখানা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে পোশাক শ্রমিকরা পাহাড়ের দুই জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় ফিরতে শুরু করেছে,তখন তাদের প্রবেশে বাঁধা,বিরূপ পরিস্থিতি ও তাদের প্রতি পাহাড়বাসির ক্ষোভ আর হতাশা যখন আর ‘চাপা থাকছিলো’ না,সেই সময় নিজ এলাকার পোশাক শ্রমিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করলো দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের যুবকরা।
গত এক সপ্তাহে খাগড়াছড়ি হয়ে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় প্রায় ৫শতাধিক লোক প্রবেশ করে বলে জানায় প্রশাসন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যেকের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে সাজেক এর বাঘাইহাট গ্রামের স্থানীয় তরুনটি ছিলো একেবারেই ব্যতিক্রমি। এই গ্রামের নোয়াপাড়া স্থানীয় যুব সমাজ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা গ্রামবাসীকে,মূলত: যাদের ঘরে বাড়তি কোয়ারেন্টিন করার মতো কক্ষ নেই,তাদের জন্য এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে আলাদা রাখতে গ্রামেই পৃথক মাচাং ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে।
উদ্যোক্তা এসব স্থানীয় যুবক জানান, পরিবার থেকে দূরে রাখতে এই ব্যবস্থা। তারা যেহেতু দূর থেকে এসেছে সেই মোতাবেক তারা আগামী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা জরুরী। তাই আমরা তাদের আলাদা থাকার জন্য (মাচাং) ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। এর ফলে পাড়ার বা গ্রামের সকলকে নিরাপদ রাখা যাবে।
এ বিষয়ে সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট নোয়াপাড়ার ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নয়াধন চাকমা বলেন, গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় অনেকে এখনো বেতন পায়নি। বেতন না পাওয়ার কারনে তারা ঘরভাড়া, দোকান বাকীর টাকা দিতে পারছেনা। তাই তারা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। তাদের কারনে আমাদের গ্রামের অন্য কেউ যাতে ঝুঁকিতে না পরে সে জন্য মাচাং ঘরের তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানান, এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে পোশাক শ্রমিকরা বাড়ি আসছেন। সরকারি ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। যাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা নাই, তাদের জন্য পাশ্ববর্তী বিদ্যালয় অথবা গ্রামের যুবকরা মিলে মাচাং ঘর তৈরি করে দিচ্ছে এবং তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু জানান, কয়েকদিন ধরে কয়েকশত পোশাক শ্রমিকরা সব কিছু বন্ধ থাকার পরও তারা বাঘাইছড়ি প্রবেশ করছে। তারা যদি এই রোগ সর্ম্পকে সচেতন না হন তাহলে এটি মহামারী রূপ নিয়ে পারে। যারাই আসছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে হোম কোয়ারেন্টি নিশ্চত করা হচ্ছে। সাজেকের স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগটি আমি শুনেছি। এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ।’