কোভিড-১৯ : প্রতিবাদী দূরবন্ধন ও নাগরিক প্রতিবাদ এবং আমাদের দায়বদ্ধতা

কোভিড -১৯ (করোনা ভাইরাস)-এ আক্রান্ত হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চারদিকে যেন মুত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। চেনা ও জানা অনেকেই করোনার ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রায়শঃই প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে চরম অমানবিকতার ঘটনা। সবমিলিয়ে বাচাঁর আকাঙ্খাই যেন এখন এক অধরা স্বপ্ন। চারদিকে আক্রান্ত হবার অবারিত সুযোগ। দিন দিন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তদের সংখ্যা। মানসিক অস্থিরতা ও দৃঢ়তা যেন আজ সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ! এদিকে সরকার, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এর মাঝে রয়েছে অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য আর সীমাহীন সমন্বয়হীনতা। যার ভূক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ জনগণ। প্রিয়জনের শেষকৃত্যেও অংশ নিতে পারছেনা অনেকেই। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত করোনা.গভ.বিডি ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (১১-০৬-২০২০ ০২:৪৯ পি.এম. সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮০৫২ জন, মোট মুত্যুর সংখ্যা ১০৪৯, মোট সুস্থ্য হয়েছেন ১৬৭৪৮ জন।
এই তথ্য ও করোনার আক্রান্তের বাস্তবতার সাথে অনেকেই ভিন্নতা খুজে পান। পরীক্ষা করাতে গিয়েও অনেককে দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। করোনা প্রতিরোধে যেসকল উপকরণ এখন নিত্য প্রয়োজন সেসব পন্যেও চলে মূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি। শুধু তাই নয় করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে উপকারি ও কার্যকর উপায় হলো হাত ধোয়া ও মুখে মাস্ক লাগানো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এই মহামারির সময়েও ব্যবহৃত মাস্ক ধুয়ে এবং নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করে বাজারজাতকরণে ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালায়। মানুষ যখন এই সময়ে এই মানুষখেকো অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের হাত থেকে নিঃস্কৃতি পাবার জন্যে হন্যে পাগলপ্রায়, তখন একশ্রেণীর মানুষ মানুষের জীবনের এই দুঃসময়কে পুঁজি করে শুধুমাত্র মুনাফার জন্য মানুষের জীবনকে বিপন্ন করার কাজে লিপ্ত। শুধু তাই নয়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার নামে চলছে কৃত্রিম সংকট, অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেখার ও শোনার যেন কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে লুটে পুটে খাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, এর ৮৬ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের। তাদের কেউ হাসপাতালে, কেউ বাসায় আবার কেউবা হাসপাতালে আসার পথে মারা যান। আর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এ সকল অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের শিক্ষক-সাংবাদিক-আইনজীবী ও রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা মিলে চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সম্প্রতি (৭ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি চত্বরে ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন, চট্টগ্রাম’-এর ব্যানারে প্রতিবাদী দূরববন্ধনে থেকে জানানো হয় বিদ্যমান অচলাবস্থার উন্নয়নে কিছু দাবী। ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নৈরাজ্য বন্ধ কর, মানুষ বাঁচাও-সহ ন্যায্যমূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দুইশ শয্যার আইসিইউ বেড নিশ্চিত করা, জোনভিত্তিক আইসোলেশন কেন্দ্র চালু, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও মজুতদারী বন্ধ করা, ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, নমুনা সংগ্রহে এলাকাভিত্তিক বুথ ও দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান, জনস্বাস্থ্য বাঁচাও মানুষ বাঁচাও দাবী জানানো হয়।
সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এ নিয়ে যেমন সন্দেহ নেই, তেমনি বাস্তব সীমাহীন অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এটিও চরম সত্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মানুষের দুর্ভোগগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে, শুধুমাত্র লকডাউন বা রেডজোন করে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রতিনিয়ত নিচ্ছেন, সেই সাথে চট্টগ্রামে ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন’ ব্যানারে সচেতন নাগরিক সমাজের এই দাবীগুলো সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।
লেখক : সুমিত বণিক, জনস্বাস্থ্যকর্মী। ই-মেইল: sumitbanikktd.guc@gmail.com