কোন সাইফুল হবেন রাঙামাটি বিএনপি’র প্রথম সহসভাপতি ?

সুহৃদ সুপান্থ
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সম্মেলন শেষ হয়েছে মাসচারেক হলো। এখনো গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সভাপতি হাজী মোঃ শাহ আলম এর শারীরিক অসুস্থতা ও ভারতে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কার্যক্রম। থেমে নেই আলোচনা-মূল্যায়ন-বিশ্লেষন কোন পদে ফিরছেন বা পাবেন নতুন কমিটিতে । তবে সব আলোচনা চাপিয়ে এখন সবার নজর কে হচ্ছেন নতুন পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির প্রথম সহসভাপতি,সেদিকেই।
আর এই দৌড়ে প্রানান্ত চেষ্টায় আছেন জেলা বিএনপির বিদায়ী কমিটির দুই শীর্ষ নেতা,সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনির। প্রকাশ্যে দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কোন বিরোধ বা দ্বন্দ্ব কিংবা তৎপরতা চোখে না পড়লে বসে নেই একজনও। দুজনই প্রানান্ত চেষ্টা করছেন নিজেকে প্রথম সহসভাপতি পদে বসাতে।
কিন্তু কেনো ?
সচরারচর সহসভাপতি বা সহসম্পাদকের পদগুলোর দায়িত্ব মূলত মূল পদকে সহযোগিতা করার থাকলেও সাংগঠনিক কারণেই প্রথম সহসভাপতি ও প্রথম যুগ্ম সম্পাদকের পদটির প্রতি বাড়তি মনোযোগ থাকে সবার। কারণ সভাপতি বা সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে,এই পদে থাকারাই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান। যদিও সাংগঠনিক নিয়মে বাধ্যবাধকতা নেই প্রথমজনকেই দেয়ার,তথাপি প্রচলিত নিয়মেই অনুসরন করা হয় এই রীতি। আর রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি নিপাদ ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত হাজী মোঃ শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত থাকায় ধারনা করা হচ্ছে,তার রাজনীতিতে ফেরাটা কঠিন। কিংবা ফিরলেও আগের মতো স্বাভাবিক রাজনীতি করাটাও দুরুহ হবে। ফলে যিনি প্রথম সহসভাপতি হবেন,তিনিই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। এই আকাংখার কারণেই সবার নজর এখন এই পদের দিকে।
কেনো গুরুত্বপুর্ণ ভূট্টো ও পনির ?
সর্বশেষ কাউন্সিলের সভাপতি পদে হাজী মোঃ শাহ আলম এর সাথে সভাপতি পদে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সাবেক পৌরমেয়র ও জেলা কমিটির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো। প্রত্যাশার বিপরীতে অস্বাভাবিকসংখ্যক বেশি ভোট পাওয়া ভূট্টো পরাজিত হলেও হাজী শাহ আলমের সাথে তার কঠিন লড়াই বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে। বরাবরই কূশলী রাজনীতির কারণে পরিচিত ভূট্টো সভাপতি পদে হেরে গেলেও তাই প্রথম সহসভাপতি হওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়েই আছেন। তার বিশ^াস,যেহেতু সভাপতি নির্বাচন করেছেন তিনি,সেহেতু তিনিই পাবেন এই পদটি।
অন্যদিকে সাধারন সম্পাদক পদে লড়াইয়ের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেও শেষ মুহুর্তে সরে যান সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির। নিজেদের বলয়ের প্রার্থী দীপন তালুকদারকে ছাড় দিয়ে নিজেকে বিসর্জন দেন পনির,মূলত তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিলো,তার এই ছাড়কে মূল্যায়ন করবে তারই ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে পরিচিত শাহআলম-দীপু। যদি সেই মূল্যায়ন ঠিকঠাক মতই হয়,তবে সম্ভবত পনিরই হচ্ছেন প্রথম সহসভাপতি !
কি বলছেন ভূট্টো-পনির ?
প্রথম সহসভাপতি হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সাইফুল ইসলাম ভূট্টো। তিনি মনে করেন, এটা তার নায্য পাওনা এবং এটা নিয়ে কারো অনায্য দাবি করার সুযোগ নাই।
ভূট্টো বলছেন, ‘ আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছি। তবে দলের বিগত কমিটির তৃতীয় সহসভাপতি ছিলাম আমি,আমার আগে থাকা একজন দলত্যাগ করেছেন,অন্যজনও অতটা সক্রিয় নয় জেলার রাজনীতিতে,সঙ্গত কারণেই আমিই একমাত্র দাবিবার প্রথম সহসভাপতি পদের। এখন কেউ যদি নিয়ম না মানে,কেউ যদি অন্য কিছু করতে চায়,সেটা অত সহজে হবেনা কিংবা পারবেনা। বাকিটা দেখা যাক।’
অন্যদিকে সাইফুল ইসলাম পনির বলছেন, দলের স্বার্থে এবং প্রয়োজনে আমি সর্বশেষ কাউন্সিলে নিজেকে কোরবান দিয়েছি। আমি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম এবং যেহেতু সম্পাদক ও সভাপতি পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন,সেহেতু আমিই প্রথম সহসভাপতি হই, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার এসব নিয়ে ভাবনা নেই। দল যদি আমাকে প্রথম সহসভাপতি করে আমি দায়িত্বের সাথে নিজের কাজটি করতে পারব,দল যে সিদ্ধান্ত নিবে,দলীয় নেতারা যে বিষয়ে ঐক্যমত হবেন,তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন থাকবে।’
পনির বলছেন, তবে আমরা এখনই এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না। কারণ আমাদের নেতা শাহ আলম ভাই অসুস্থ। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক আগে। তারপর অন্য কিছু।’
এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক দীপন তালুকদার দীপু বলছেন, ‘ আমাদের সম্মেলন শেষ হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। তবে সভাপতি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কিছু ভাবতে পারিনি। আপাতত তিনি সুস্থভাবে আমাদের মাঝে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সিদ্ধান্ত হবে অন্যসব। কে প্রথম সহসভাপতি হবেন কিংবা কে কে অন্যান্য পদে ঠাঁই পাবেন,এসব তখন ভাবব আমরা। আপাতত এসব ভাবছি না।’