ঠিক একমাস আগে রাঙামাটি জেলা শহরের নিকটবর্তী কুতুকছড়ি এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছিলেন পাহাড়ে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পাহাড়ীদের সংগঠন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সহযোগি সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমা। অপহরণের একমাস পার হলেও আজো খোঁজ মেলেনি দুই নেত্রীর। পরিবার কিংবা সহযোদ্ধা কেউই জানেনা,কোথায় কেমন আছেন এই দুই নেত্রী। অথচ অপহৃত মন্টি চাকমা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক এবং দয়াসোনা চাকমা রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক। গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় এই দুই নেত্রীর অপহরণের পর নানান কর্মসূচী পালন করলেও সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র হামলায় দিশেহারা ইউপিডিএফও এখন কার্যত বাঁচার তাগিদেই কমিয়ে দিয়েছে কর্মসূচীও।
অপহরণের পর সংগঠনটির জেলা সংগঠক সচল চাকমা ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে প্রথমে জানিয়েছিলেন এই অপহরণে ঘটনা।
ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো,১৮ মার্চ ‘ সকাল সোয়া নয়টার দিকে সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা ধর্ম সিং চাকমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। দুর্বৃত্তরা ছাত্রদের একটি মেসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং জঙ্গী গোষ্ঠী বোকো হারামের স্টাইলে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে আবাসিকের বৌদ্ধ মন্দিরের পাশ দিয়ে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের পর্ব পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়।’ ইউপিডিএফ নেতা উক্ত হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক’ অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিকভাবে ইউপিডিএফ-কে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে তার উত্থানকে রুদ্ধ করতে চাইছে।’
ইউপিডিএফ এই ঘটনার জন্য তাদের সংগঠন থেকে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কে দায়ি করলেও তবে ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনাবিভাগের প্রধান নিরন চাকমা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, আমরা দুই নেত্রীর এখনো কোন খোঁজ পাইনি। তারা কোথায় আছে,কেমন আছে জানিনা। তবে তাদের কারা নিয়েছে সেটাতো স্পষ্ট। মদদপুষ্ট মুখোশবাহিনীর কাজ এটি। আইনশৃংখলা বাহিনীও তাদের খোঁজে তৎপর বলে মনে হয়নি কখনই। তিনি বলেন, ৯৬ সালের কল্পনা চাকমার অপহরণের ধারাবাহিকতায় এই অপহরণ ঘটনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রন ও নারীদের প্রতিবাদ স্তব্দ করার পাঁয়তারা হিসেবেই এই অপহরণ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
এদিকে অপহরণ ও হামলার প্রতিবাদে ও অপহৃতদের মুক্তির দাবিতে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ,ধর্মঘটসহ নানান কর্মসূচী পালন করেছে গত একমাস ধরে।
এবিষয়ে রাঙামাটির কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন, আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যেহেতু দুর্গম পাহাড়ী এলাকা,সঠিক তথ্য পাওয়াও অনেক কঠিন। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, মাসছয়েক আগে ইউপিডিএফ এর সাবেক কিছু নেতাকর্মী মিলে ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন গঠন করে। এই সংগঠনের হামলায় এযাবৎ আটজন মূল ইউপিডিএফ কর্মী নিহত হয়েছে। নিহতরা প্রায় সবাই সংগঠনটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে,দুই ইউপিডিএফ এর বিরোধ আর জিঘাংসার শিকার হয়েছেন এই দুই নেত্রী।