রাঙামাটি শহরের সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম সিএনজি অটোরিক্সা। দেশের অন্যান্য শহরে রিক্সা কিংবা টমটম থাকলেও যোগাযোগের অসুবিধার কারণে এই শহরে এই দুই বাহনের সার্ভিস পায় না স্থানীয় জনগণ। দুই সংগঠনের মাধ্যমে শহরে সহ¯্রাধিক অটোরিক্সা চলাচল করছে। সে হিসেবে সহস্রাধিক চালক গাড়ি চালিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু বৈঞ্চিক করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশও করোনা ঝুঁকির মুখে পড়ায় বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে শহরের সব অটোরিক্সা চলাচল। যার ফলে দুর্ভোগে রয়েছেন বর্তমানে অটোরিক্সার চালকরা। যেখানে দৈনিক আয়ের ওপর তাদের সংসার চালাতে হয় সেখানে আজ প্রায় ২০ দিন বন্ধ রয়েছে গাড়ি চলাচল, তার ওপর কখন এই গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে, সেটাও জানা নেই কারো। যেখানে দৈনিক আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয়, সেখানে এতোদিন ধরে আয় বন্ধ থাকায় সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান চালকরা। গত ২৬ মার্চ থেকে গাড়ি বন্ধ হওয়ার আগের দিন বিকেলে রাঙামাটির অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে সদস্যদের কল্যাণ ফান্ড থেকে প্রত্যেক সদস্যকে ২৫ কেজি চাল ও ৫ লিটার করে তেল দেয়া হয়েছিল। যেটা এখন প্রায় পুরিয়ে এসেছে।
শহরের অটোরিক্সা চালক আব্দুর গফুর বলেন, আমরা অন্যজনের গাড়ি চালিয়ে দৈনিক যা আয় করতাম, তাই দিয়েই সংসার চালাতে কষ্ট হয়, সেখানে কিভাবে এতোদিন আয় বন্ধ ছাড়া চলছি, সেটার খবর কেউ নেয় না। এক দুইদিন হরতাল দিলেই যেখানে আমাদের চলতে কষ্ট হতো, সেখানে আজ এতোদিন আয় বন্ধ, আমাদের কি অবস্থা সেটা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। এভাবে আর কতদিন চলতে হবে আমরা জানি না। সরকারের তরফ থেকেও আমাদের কোন সাহায্য দিচ্ছে না।
আরেক চালক অপু সাহা বলেন, আয় বন্ধ থাকায় পরিবারের চাল, ডালসহ বাজার করতে পারছি না। দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছি। ২০ দিন আগে সমিতি থেকে ২৫ কেজি চাল, আর ৫ লিটার তেল দিয়েছিল, কিন্তু ২৫ কেজি চাল দিয়ে কি আমরা এতোদিন চলতে পারবো? আমরা শহরের মানুষকে সেবা দিয়ে থাকি, এক ঘণ্টা গাড়ি বন্ধ রাখলেই সকলেই আমাদের জাত তুলে গালিগালাজ করে, সেখানে আমরা এতোদিন কিভাবে চলছি, কই কেউ তো খবর নিচ্ছে না।
অটোরিক্সা চালক আব্দুর রহমান বলেন, এভাবে বসে বসে আর কতদিন চলতে পারবো আমরা জানি না। কষ্টে আছি, কিন্তু আমাদের খোঁজও কেউ নিচ্ছে না। আমাদের কাছে জমানো কোনও টাকা নেই যে এতোদিন বসে বসে খেতে পারবো। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে যদি সমিতির মাধ্যমে আমাদের চালকদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতা দিত, অন্তত আমরা দু’মুঠো চাল হলে পেতাম।
রাঙামাটি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। সদস্যরা কষ্টে আছে। প্রতিদিনই তারা কল দিচ্ছে, তাদের খাবার নেই। সমিতি থেকে প্রায় সাড়ে ১৩শ’ সদস্যকে ২৫ কেজি চাল আর ৫ লিটার তেল দিয়েছি, সেগুলো দিয়ে তারা কতদিন খেতে পারবে? আমরা সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে গেলেও আমাদের বিপদে এখন কেউ এগিয়ে আসছে না।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক থেকে আড়াই মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু এগুলো এখন বিলি করলে কেউ ২ কেজি চালও পাবে না। তারপরও আমরা জোন কমান্ডার মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের কিছু সহযোগিতা করবেন, এছাড়া মেয়রের সাথে যোগাযোগ করেছি, মেয়র আমাদের থেকে সদস্যদের তালিকা চেয়েছেন আর সদর উপজেলায় যোগাযোগ করেছি, সেখানে কিছু নেই বলে জানিয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদের থেকে কিছু সহযোগিতা পাওয়ার জন্য মুছা ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি।’ তিনি বলেন, সরকারিভাবে এগিয়ে না আসলে চালকদের কয়েকদিন পর থেকে না খেয়ে থাকতে হবে।