
দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন। আগামী ২৪ নভেম্বর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়ে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। সম্মেলন সফল করতে চলছে জোর প্রস্তুতি।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর। ইতিমধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার লোক সমাগমের কথা মাথায় রেখে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে তৈরি হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল। উপজেলা, পৌর আওয়ামীলীগের সম্মেলন শেষে এখন সবার দৃষ্টি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দিকে। কে আসছেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে সভাপতি এবং জাহেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তবে বছর তিনেক পর থেকে আওয়ামীলীগে দেখা দেয় অস্বস্তি। দলবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের সাথে বিরোধ তৈরি হয় আওয়ামীলীগে।
বিরোধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ে তৃণমূলে। মামলা, হামলা বিরোধপূর্র্ণ অবস্থানে কাটে বাকী সময়। শেষ পর্যন্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ বহিষ্কারের খড়গ পরে জাহিদুলের ওপর। ২০১৬ সালের শুরুর দিক থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলে জেলা আওয়ামীলীগ। গেল সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে দৃশ্যত নিজেদের গুছিয়ে চলতে থাকা আওয়ামীলীগের ভেতর এখন রয়েছে বিরোধীপন্থীর ঘ্রাণ। তাই এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আসন্ন সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে ৩জনের নাম আলোচনায় থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছে ৪জন। সভাপতি পদে রয়েছেন বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সহ সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা এবং সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহিস উদ্দিন। তবে এই ক্ষেত্রে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রার্থীতার দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে। তবে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।
এই পদে লড়ছেন ৪জন। তাঁরা হলেন বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, সহ সভাপতি মনির হোসেন, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শামছুল হক, জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম। তবে এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে গুঞ্জনের তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জব্বার, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ কাশেম’র নামও।
এদিকে ২০১৫সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনের পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। তিনিও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। একই সাথে তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব।
নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, দুঃসময়ে আমি দলের হাল ধরেছি। দীর্ঘ চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবার আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি। বাকীটা আমি দলের নেতাকর্মীদের ওপর ছেড়ে দিলাম। তারা আমাকে মূল্যায়ন করবে।
একই পদে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম। ছাত্রলীগ, যুবলীগে থাকা সমর্থকরা শহরজুড়ে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড লাগিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। বড় ভাই দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম এবং দলে বিভক্ত অবস্থান নেয়ায় অনেকটা কোনঠাসা হয়ে যান এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘২৮ বছর ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নেতাকর্মীদের সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাই আমি আশা করি আসন্ন সম্মেলনে দল আমাকে মূল্যায়ন করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে।
অনেকটা একই কথা জানালেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র মোঃ শামছুল হক। তিনি বলেন, সবাই চাই দলের ভালো একটি অবস্থানে যেতে। আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের সাথে আছি। তাই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি। বাকিটা কাউন্সিলরদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
এদিকে সভাপতি পদে আছেন জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সহ সভাপতি সমির দত্ত চাকমা ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহিস উদ্দিন। এক্ষেত্রে অনেকটা নিশ্চিন্তে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা কথা বলতে অনাগ্রহ দেখান। অপর দিকে রহিস উদ্দিনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
বর্তমান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, দীর্ঘ ৭বছর পর কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহু প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন নেতাকর্মীদের নতুন করে চাঙ্গা করেছে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিতরা দলকে আরো বেশি শক্তিশালী করবে। তৃণমূল যদি চায় তাহলে তিনি পুনরায় দলের হাল ধরবেন বলে জানান।
এদিকে সম্মেলনে বাড়তি মাত্রা যোগ করবেন কেন্দ্রের একাধিক নেতা। এরমধ্যে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য দিপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চাইথোঅং মারমা বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি এই সম্মেলনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার লোকের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।