জিয়াউল জিয়া ॥
তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর শেষ হচ্ছে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। আগামী ১৭ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৮ আগস্ট সকালে থেকে হ্রদে মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন ব্যাবসায়ী ও জেলেরা।
সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রতি বছরের মতো এবার পহেলা মে থেকে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে ১ আগস্ট থেকে মৎস্য আহরণ শুরু করা যায়নি। কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটি হ্রদে পর্যান্ত পানি না থাকায় ইতোমধ্যে দুই দফায় ১৭দিন মৎস্য শিকার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। গত ১০ আগস্ট কাপ্তাই হ্রদের মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণ বিষয়ক এক সভায় মাছ শিকার শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বিএফডিসি সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে মৎস্য অবতরণ ১৩ হাজার ৯১৫ মে: টন এবং রাজস্ব আয় ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। ২০২০ সালে পোনা অবমুক্ত করা হয় ৪৩.০৮ মে: টন।২০২১-২২ অর্থ বছরে র্মাচ/২২ পর্যন্ত মৎস্য অবতরণ ১৭ হাজার ৮৭০ মে: টন এবং রাজস্ব আয় ১১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। ২০২১ সালে পোনা অবমুক্ত করা হয় ৪৫.৯২ মে: টন। ২০২২ সালে পোনা অবমুক্ত করা হয় ৬৪ মে: টন।
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকারের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২৫ হাজার জেলে। এদিকে পানি সঙ্কটে কারণে মাছের সুষ্ঠু বংশবিস্তারের জন্য হ্রদে মৎস্য শিকারের বন্ধ থাকায় বেকার সময় কাটে জেলে পরিবারের। মাছ শিকার শুরুর ঘোষণা আসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। কেউ পুরনো জাল সেলাই নৌকা বা বোট মেরামতে ব্যস্ত সময়ে পার করতে দেখা গেছে। সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানান জেলেরা।
রির্জাভ বাজার পুরাতন জেলা পাড়ার মধু দাস বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময় আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটে। মাছ ধরা খুলে দিচ্ছে আমরাও পুরনো জালগুলোতে যেখানে ছিড়া আছে সেগুলো ঠিক করছি। ১৭ তারিখ রাতে মাছ ধরা শুরু হবে। আমাদের খুব ভালো লাগছে।
আরেক জেলে মঙ্গল ধন চাকমা জানান, আমরা বোট, নৌকার মেরামত ও রংয়ের কাজ করছি। অপেক্ষায় আছি কখন নদীতে মাছ ধরতে নামবো।
মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়–য়া জানান, দীর্ঘ বন্ধ থাকার পর আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে বিএফডিসি এলাকায়। আমরাও ড্রাম কাটা, জেলের টাকা পাঠানোসহ সকল কাজ সেরে নিয়েছি। আশা করছি গতবছরের তুলনায় এবার ভালো ও বড় মাছ পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, হ্রদে পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে হ্রদে ৯৬ ফুট (এমএসএল মীনস সি লেভেল) পানি রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৮ আগস্ট থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিবছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। তবে কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মাছ শিকারের দুই দফা সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ১৭ আগস্ট মধ্যরাত হতে আবারও মাছ শিকার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।