জিয়াউল জিয়া ॥
গার্ডারে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফাটল ঢাকতে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেয়া হয়েছে। এটি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অধীনে ডিপুর মুখ এলাকায় নির্মাণাধীন সেতু। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নি¤œমানের কাজের কারণে সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ না করায় নৌ চলাচল বাধা মুখে পড়বে। এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন।
পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অধীনে ছোট ছোট সেতু নির্মাণ করে থাকে। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন ডিপুর মুখ এলাকায় আমতলী এবং গুলশাখালী ইউনিয়নে যোগাযোগের সুবিধার্থে ৩৮ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ফুট প্রস্থের ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অধীনে নির্মাণাধীন এই সেতুর কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই ইতোমধ্যে ঢেবে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নি¤œমানের কাজের কারণে সেতুটি ঢেবে গেছে। এছাড়া পরিকল্পনা ছাড়ায় সেতু নির্মাণের কারণে এর নিচ দিয়ে নৌ পথে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে যাতে খরচ বাড়বে পণ্য পরিবহনে অভিযোগ এলাকাবাসী। শুধু এটিই নয়, একই ইউনিয়নের একরাম পাড়ায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নির্মাণ করা এই সেতুটির ছাদের অংশও খসে পড়েছে। তাতে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নেন ইউপি চেয়ারম্যান। বাঘাইছড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র মতে উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট ১৯টি সেতুর কাজ নির্মাণ করা রয়েছে।
মো. আবু হানিফ বলেন, গত বছর সেতুর অর্ধেক কাজ করে এবং এবছর সেতুর বাকী কাজ করে ঠিকাদার। সেতুর ছাদ ঢালাই করার সময় সেতুর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়, তখন স্থানীয় অনেকে সেতু নির্মাণ কাজের গুনগত মান প্রশ্ন তুললেও কোন সমাধান হয়নি।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানান, স্থানীয়রা যখন অভিযোগ করতে শুরু করলেন তখন ফাটল স্থানে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঘষামাজা করে ঠিকাদার। পরে শুনেছি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সেতু দিলে চলাচল করা মানে মৃত্যুকে সাথে নিয়ে চলাচল করা। তিনি আরও বলেন, বাঘাইছড়ি ও লংগদু এই দুই উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। উল্টো এই সেতু যোগাযোগের নামে আরও বিপদ ডেকে আনলো।
মো. হারুন মিয়া জানান, যে নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, দুই পারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। এই সেতু নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে গেল সেতুর কারনে পণ্যপরিবহনে বাধা তৈরি হবে। সেই ক্ষেত্রে পণ্যপরিবহণের খরচ বৃদ্ধি পাবে।
ব্রিজটিতে নি¤œমানের কাজের অভিযোগ করেও সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, স্থানীয়রা যখন আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন সাথে সাথে আমি সেতুটি পরিদর্শনে যাই এবং ব্রিজটিতে নি¤œমানের কাজের অভিযোগ করেও সমাধান হয়নি। আমার ইউনিয়নে সেতু নির্মাণ হয়েছে কিন্তু আমার কাছ থেকে কেউ ছাড়পত্রও নেয়নি। এলাকার উন্নয়নের জন্য আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করি এবং সেটি যদি নি¤œমানের হয় তাহলে আমাদের কষ্টগুলো কষ্টেই থেকে যায়। আমরা চাই কাজগুলো যথানিয়মে হচ্ছে কিনা যাদের দেখার কথা তারা যেন সেটি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।