জয়নাল আবেদীন, কাউখালী ॥
কাউখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইছহাক এর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি নাজমুন আরা সুলতানা বরাবরে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক পরিষদ। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ অভিযোগ দেওয়া হয়। বিষয়টি অভিহিত করা হয়েছে কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামশুদোহা চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চিংকিউ রোয়াজাকেও।
অভিযোগপত্রের সাথে সংযুক্ত শিক্ষক পরিষদ এর সর্বশেষ সভার রেজুলেশন থেকে জানা যায়- কাউখালী ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠা থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আব্দুল কাদের তালুকদার, চাকুরীর অবসর জনিত কারণে ২০১৯ সালে অবসরে যান তিনি। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইছহাকা। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন অনিয়মের। পূর্বের অধ্যক্ষ থাকাকালীন কাউখালী কলেজকে সরকারী কলেজে হিসেবে ঘোষনা দেন সরকার। অধ্যক্ষ অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল মূল সনদ সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে নেন। যা অদ্যবধি ফেরত দেয়নি, দিচ্ছে না।
আরও জানাযায় ২০২০ সালে শিক্ষা সফরে যাওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে শিক্ষা সফরে না গিয়েও টাকা আত্মসাত করা, ২০২০ সালের এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফরম পূরণের ফি বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের ফেরৎ না দেওয়া, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফরম ও উপবৃত্তি ফরম বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করা, শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় না করা, যার ফলে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হওয়া, শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, শিক্ষক/কর্মচারীদের জাতীয়করণের বিষয়ে কার্যত পদক্ষেপ না নেওয়ার সহ নানা অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়াও নাম প্রকাশ না করা শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান- প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় জাতীয় দিবসগুলোতেও তিনি উপস্থিত থাকেননা। এমনকি গত ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে তিনি সপ্তাহে ৩ দিন কলেজে আসেন। অন্য দিন গুলোতে প্রশাসনিক কাজে বিগ্ন ঘটে।
কাউখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অংপ্রু মারমা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান- কাউখালী উপজেলার প্রায় মানুষই শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সন্তানরা কাউখালী কলেজে পড়ে। অধ্যক্ষ ২০২০ সালের এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফি এর টাকা ফেরৎ দেয়নি। অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি ব্যক্তিগত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করি, এমনকি মাসিক সমন্বয় সভায়ও উপস্থাপন করি। এর পরেও শিক্ষার্থীরা তাদের পাপ্য ফেরৎ পায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
কাউখালী কলেজে পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মোস্তফা কামাল মহিম বলেন- অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী অভিভাবকের অভিযোগের শেষ নেই। যেহেতু একটি মেয়াদে পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলাম তাই অনেক অভিভাবক এখনো বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেন। ২০২০ সালের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরৎ না দেওয়ার বিষয়েও অনেকেই জানিয়েছে আমাকে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় বিভিন্ন খাত দেখিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন এই অধ্যক্ষ। এরকম চলতে থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাউখালী কলেজে পিছিয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কাউখালী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি নাজমুন আরা সুলতানা এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান- শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমি আমলে নিয়েছি। তদন্ত করে দেখবো। এমনওতো হতে পারে না যে আমি সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিবো আবার এমনও হতে পারে না যে বিষয়টা আমি ফেলে রাখবো। সুতরাং এ বিষয়ে যথাযথ খোঁজখবর নিতে হবে, সত্য, অসত্য বের করতে হবে। তার পরে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা নিয়ে লিখবো। উনাকে শাস্তি দেওয়া বা না দেওয়ার কোন এখতিয়ার আমি রাখি না।
এতসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য নিতে কাউখালী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইসহাক মিয়া এর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ৩ বার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভি করেননি। পরবর্তীতে অত্র কলেজের অফিস সহকারী মাধ্যমে এই প্রতিবেদন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছে জানালে তিনি প্রতিবেদকের ফোনকল ধরেন। এসময় তিনি মোবাইল ফোনে জানান- শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের টাকা শিক্ষার্থীরা আসলে ফেরৎ দেওয়া হবে। ২০২০ সালের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা অলরেডি ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। ভর্তি ফরম, উপবৃত্তি ফরম ও ভর্তির সময় বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এগুলো আগে থেকে চলে আসছে আমি নতুন করে কিছু শুরু করিনি। শুধু আমার সময় না পূর্বের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে প্রত্যেক কলেজে এই সিস্টেম আছে যারা এসব নিয়ে কাজ করেত তারা এই টাকা ভাগ করে নেয়। এটাই হচ্ছে নিয়ম। এটাতো নতুন কিছু না এটা আগে থেকে যেভাবে চলতেছে সেভাবেই চলছে।
শ্রেণি কার্যক্রম সঠিক ভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়াতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যচার করছে শিক্ষকরা। আমি যাতে প্রেসার ক্রিয়েট না করি সে জন্য এসব অভিযোগ তুলছে। আমি কলেজকে সিস্টেমে আনার চেষ্টা করছি বলে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।