প্রান্ত রনি
টানা দুই সপ্তাহের অবিরাম জনসংযোগের পর অবশেষে রাঙামাটি পৌরসভার কাংখিত ভোট আজ। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই ভোটযুদ্ধে বিজয়ীরাই হবেন রাঙামাটি পৌর এলাকার জনপ্রতিনিধি। আজ বিকেলের পরই শেষ হাসি হাসবে কে? সেটি নির্ধারণ হবে ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতির প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের মধ্য দিয়েই।
এদিকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও জনসংযোগের শুরু থেকেই প্রার্থীরা একে-অন্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, নির্বাচনী কাজে বাধা প্রদানসহ নানান অভিযোগ করে আসছেন। ভোটযুদ্ধের দিনও সেই শঙ্কা উঁড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। পৌর এলাকার ৪নং ও ৭নং ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ও ৩১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বলছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান জানান, ‘৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ ও বিজিবি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে র্যাব।’
রাঙামাটি পৌরসভার এবারের সাধারণ নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ প্রার্থী ও ৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে আকবর হোসেন চৌধুরী, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে মামুনুর রশিদ মামুন, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে প্রজেশ চাকমা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত কোদাল প্রতীকে আব্দুল মান্নান রানা এবং আওয়ামীলীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী অমর কুমার দে মোবাইল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন সুষ্ঠু নির্বাচন উপহারের জন্য ‘বহিরাগত’দের শহর ছাড়া করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান থেকে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতকে রাঙামাটিতে আনা হয়েছে ভোটের পরিবেশ বিনষ্টের জন্য। তারা শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউজ ও বাসাবাসীতে অবস্থান করছে। ‘বহিরাগতদের’ শহর ছাড়া না করলে যে কোনো পরিস্থিতির দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’
এদিকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র পদে জয় প্রত্যাশী আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি রাঙামাটি শহরকে সম্প্রীতির শহরে পরিণত করতে: অনেকাংশেও আমি সফল হয়েছি। আশা করছি, দ্বিতীয় মেয়াদে রাঙামাটি পৌর এলাকার মানুষ আমাদের জয়ী করবেন। এবং আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে সুযোগ দেবেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৬২ হাজার ৯১৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৪ হাজার ২৪২ ও নারী ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৭১। ৯টি ওয়াার্ডে মোট ৩১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা ২০১। এরমধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৩২; নারী ভোটার ২ হাজার ৭৩২ ও পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৩০০। ২নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭১; নারী ভোটার ২ হাজার ৮৬৭ ও পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৯০৪। ৩নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ২৮৬; নারী ভোটার ২ হাজার ৫০১ ও পুরুষ ভোটার ২ হাজার ৭৮৫। ৪নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩; নারী ভোটার ২ হাজার ৮১৯ ও পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৪৭৪। ৫নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ১৫৩; নারী ভোটার ২ হাজার ৫০২ ও পুরুষ ভোটার ২ হাজার ৬৫১। ৬নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৮০৩; নারী ভোটার ৩ হাজার ২০৩ ও পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৬০০। ৭নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৩১১; নারী ভোটার ৩ হাজার ৫৩০ ও পুরুষ ভোটার ৪ হাজার ৭৮১। ৮নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৬৫০; নারী ভোটার ৫ হাজার ১১৩ ও পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৫৩৭। ৯নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৭ হাজার ৫৮৫; নারী ভোটার ৩ হাজার ৩৬৫ ও পুরুষ ভোটার ৪ হাজার ২২০।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ, ৯ জন আনসার সদস্য সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি পুলিশের ১১টি মোবাইল টিম ও ১১ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনে সংঘাত এড়াতে কাজ করছে। বিজিবি ও র্যাব পুরো শহর টহলের আওতায় রাখবে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে তিনজন ইউএনও এবং দুজন এসিল্যান্ড রয়েছেন।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ষোষ জানান, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি পুলিশ-প্রশাসন গ্রহন করেছে। ভোটাররা যেন নিবিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন; সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আশা করছি, কোনো ধরণের সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।