এপ্রিল মাসের ১৭ পেরিয়ে ১৮ তারিখ আজ। এরই মাঝে চলে গেছে পহেলা বৈশাখ,বৈসাবি এবং চৈত্রসংক্রান্তি। এই করোনাকালে মার্চ মাসের বেতনই এখনো পাননি প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার রাঙামাটি পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারিরা। ইতোমধ্যেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের বেতন পরিশোধ করা হলেও বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ৭০ জন কর্মচারির বেতন দিতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটের কারণে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা এই বছরের নতুন কোন সংকট নয়,‘প্রতিবছরই জুন মাসের আগের দুতিনটা মাস আমাদের এমন ক্রাইসিস তৈরি হয়’। কর্মচারিরাও মানছেন এই ক্রাইসিস,তবে করোনাকালিন সময়ে এই ‘ক্রাইসিস’ মেনে জীবন চালানো যে দুরূহ হয়ে পড়েছে তাদের।

পৌরসভাসূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি পৌরসভার ৭৮ জন স্থায়ী কর্মচারি এবং প্রায় ১৫০ জন আবর্জনা পরিষ্কারসহ জরুরী সেবা প্রদান বিভাগের কর্মচারী। ৭৮ জনের মূল বেতন প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা এবং বিভিন্ন ভাতা আরো প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। করজারভেন্সি স্টাফদের বেতন প্রায় ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এর সাথে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা আছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। মূলত: পৌরবাসিদের দেয়া বিভিন্ন ট্যাক্স,সনদবিক্রি,ট্রাক টার্মিনাল ও অক্টরি ইজারা দিয়েই অর্থ আয় করে থাকে রাঙামাটি পৌরসভা। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে আয়েও তৈরি হয়েছে সংকট।
রাঙামাটি পৌরসভা কর্মচারি সংসদের সভাপতি বশির আহমেদ। তিনি বলেন, আসলে এই ক্রাইসিসটা সম্পর্কে আমরাও অবহিত। তার উপর ট্যাক্স কালেকশনও বন্ধ হয়ে গেছে,তাই আমরা বেতন পাচ্ছিনা। কিন্তু সমস্যা হলো,করোনার কারণে আমরাতো বিপাকে পড়ে গেছি। কারো কাছে ধার বা সহযোগিতা চাইতে পারছিনা। পরিবার চালানো দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে। যেহেতু আমাদের বেতনেই জীবন বেতনই সংসার,বেতন ছাড়া জীবনতো কঠিন। হয়তো করোনা না হলে এই সংকট কোন না কোনভাবে আমরা ঠিকই কাটিয়ে দিতে পারতাম।’
পৌর কর্মচারী সংসদের সাধারন সম্পাদক সনৎ কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, আমরা দেখতে যাচ্ছি আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা নিজেরাই যে বিপদে আছি,এটা কাউকে বলতেও পারছিনা, সইতেও পারছিনা।’

কবে দিতে পারবেন পৌর কর্মচারীদের বেতন,জানেননা পৌর মেয়রও। তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিলেন নিজের অক্ষমতা। মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, বছরের এই সময়টাতে আমরা এমনিতেই তহবিল সংকটে থাকি,তার উপর করোনার কারণে এখন হোল্ডিং ট্যাক্স এবং পৌরকর সংগ্রহও পুরো বন্ধ। এই সংকটের মধ্যেও আমি নানাভাবে ধার ও চেষ্টা করে নিম্ন আয়ের ও জরুরী কর্মীদের বেতন দিয়েছি এবং তাদের বেতন যেনো আগামী মাসেও দিতে পারি,সেই চেষ্টা করছি। কিন্তু মূল ৭০ জন কর্মচারির বেতন কখন দিতে পারব জানিনা।’
রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইসলামউদ্দিনও জানিয়েছেন,পৌরসভার আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়টি। তিনি বলেন, এই সময় কর্মচারীদের বেতন দেওয়া আসলেই অসম্ভব পৌরসভার। তহবিলে কোন টাকাই নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করছি, কত স্বল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সুরাহা করা যায়। ইতোমধ্যেই অস্থায়ী কর্মীদের বেতন নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা রাঙামাটি পৌরসভার আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘ক’ শ্রেণীর মর্যাদা পাওয়া এই পৌরসভার জনসংখ্যা ৮৪ হাজার ৮০৪জন। পৌরসভার হিসানুসারে এর আওতায় ১৪ হাজার ৪৬৮ টি হোল্ডিং আছে। এর প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ছৈয়দ তফাজ্জল হোসেন। এ পৌরসভাকে ১৯৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ২য় শ্রেণী এবং ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারি ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এই পৌরসভার ৯ জন পুরুষ কাউন্সিলর এবং ৩ জন নারী কাউন্সিলর আছেন।
